পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাজাদপুর, ৪ঠা জুলাই, ১৮৯১ । আমাদের ঘাটে একটি নৌকে। লেগে আছে, এবং এখানকার অনেকগুলি “জনপদবধু” তার সম্মুখে ভিড় করে দাড়ি েচে । বোধ হয় একজন কে কোথায় যাচ্চে এবং তাকে বিদায় দিতে সবাই এসেচে । অনেকগুলি কচিছেলে অনেকগুলি ঘোমটা এবং অনেকগুলি পাকা চুল একত্র হয়েচে । কিন্তু ওদের মধ্যে একটি মেয়ে আছে তার প্রতিই তামার মণেযোগটা সৰ্ব্বাপেক্ষা আকৃষ্ট হচ্চে । বোধ হয় বয়সে বারো-তেরো হবে, কিন্তু একটু হৃষ্ট পুষ্ট হওয়াতে চোদ পনেরো দেখাচ্চে। মুখখানি বেড়ে । বেশ কালো অথচ বেশ দেখতে । ছেলেদের মত চুল ছাটা, তাতে মুখটি বেশ দেখাচ্চে । এমন বুদ্ধিমান এবং সপ্রতিভ এবং পরিষ্কার সরলভাব । একটা ছেলে কোলে করে এমন নিঃসঙ্কোচ কৌতুহলের সঙ্গে আনাকে চেয়েচেয়ে দেখতে লাগল ! তার মুখখানিতে কিছু যেন নিৰ্ব্বতি কিম্ব অসরলতা কিম্ব অসম্পূর্ণত নেই। বিশেষতঃ আধা ছেলে তাধা মেয়ের মত হয়ে আরো একটু বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করে। ছেলেদের মত আত্মসম্বন্ধে সম্পূর্ণ অচেতন ভাব এবং তার সঙ্গে মাধুরী মিশে ভারি নতুনরকমের একটি মেয়ে তৈরি হয়েছে। বাংলা দেশে যে এরকম ছাদের “জনপদবধূ দেখা যাবে এমন প্রত্যাশা করিনি। দেখচি এদের বংশটাই তেমন বেশী লাজুক নয়। একজন মেয়ে ডাঙায় দাড়িয়ে রৌদ্রে চুল এলিয়ে দশাঙ্গুলি দ্বারা জটা ছাড়াচ্চে এবং নৌকোর আর একটি রমণীর সঙ্গে উচ্চৈঃস্বরে ঘরকবৃনার আলাপ হচ্চে । শোনা গেল তার একটি মাত্র “মায়া” অন্ত “ছাওয়াল নাই”—কিন্তু সে মেয়েটির বুদ্ধিমুদ্ধি নেই—“কারে কি কয় কারে কি হয়—আপন পর জ্ঞান নেই”—আরো অবগত হওয়া গেল গোপাল সার জামাইট তেমন ভাল হয়নি, মেয়ে তার কাছে যেতে চায় না । অবশেষে যখন যাত্রার সময় হল তখন দেখলুম আমার সেই চুলছাটা, গোলগাল হাতে-বালা-পর, উজ্জল সরল মুখত্র মেয়েটিকে নৌকোয় তুলে। বুঝলুম, বেচার বোধ হয় বাপের বাড়ি