পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চাঁদনি চক, কটক । ৬ই সেপ্টেম্বর, ১৮৯১ । —বাবু খুব মোটাসোটা বদ্ধিষ্ণু চেহারার লোক—র্তার ভাবখানা খুব একজন লম্বাচোঁড় কৃষ্ণবিষ্ণুর মত। বয়স যথেষ্ট হয়েছে—একখানি কোচানো চাদর কাধে, ফিট্‌ফাটু সাজ, গায়ে এসেন্সের গন্ধ, দু-থাক চিবুক, প্রমাণসই গোফ, কপাল গড়ানে, বড়বড় ড্যাবাচোখ আত্মম্ভরিতায় অৰ্দ্ধনিমীলিত, কথা কবার সময় চোখের তারা আকাশের দিকে ওঠে—জলদগম্ভীরস্বরে অতি মৃদুমন্দ সুস্থ সহস্তেভাবে কথা কন,— সময় যেন অনুগত ভূত্যের মত র্তার অবসর অপেক্ষায় এক পাশে স্তব্ধভাবে দাড়িয়ে আছে—কোন বিষয়ে তিলমাত্র তাড়া নেই। চোখ দুটে উণ্টে আমাকে একবার জিজ্ঞাসাকরলেন “জ্যোতি এখন কোথায় আছে ?” প্রশ্নকৰ্ত্তার অবিচলিত গাম্ভীর্য্যে আমার অন্তঃকরণ সসন্ত্রমে শশব্যস্ত হয়েউঠল—আমি মৃদু বিনীতভাবে আমার দাদার রাজধানীতে অবস্থান জ্ঞাপনকরলুম। তিনি বল্লেন “বীরেন্দ্রের সঙ্গে আমি একসঙ্গে পড়েচি।” শুনে আমার চিত্ত আরো অভিভূত হয়েপড়ল । এর উপরে যখন তিনি— কারো পরামর্শের অপেক্ষ না রেখে অকস্মাৎ অসময়ে এখানে আসাসম্বন্ধে আমার বালকোচিত অবিবেচনার উল্লেখ করলেন তখন আমি কি রকম মান অপ্রতিভ হয়ে গেলুম সে অনুমানকর শক্ত হবে না। আমি কেবলি নতমুখে বারবার বলতেলাগলুম— আমি প্রকৃত অবস্থা কিছুই জানতুম না—আর কখনো আসিনি, এই প্রথম আসচি। তার থেকে তর্ক উঠল “জ্যোতি কখন এসেছিল”—সময়নির্ণয়সম্বন্ধে বরদার সঙ্গে তার ঘোর অনৈক্য হল । তিনি ৭৪৭৫ বলেন, বরদা বলেন তার পূৰ্ব্বে । এর থেকেই বুঝতে পারা যাবে ইতিহাস লেখা কত শক্ত । তাই মনে করচি এইবার থেকে আমার চিঠিতে তারিখ দিতেহবে ।