পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তিরণ, ৯ই সেপ্টেম্বর, ১৮৯১ । অনেকদিন পরে কাল মেঘবৃষ্টি কেটে শরতের সোনার রোদর উঠেছিল। পৃথিৰীতে যে রোর আছে সে কথা যেন একেবারে ভুলেগিয়েছিলুম ; হঠাৎ যখন কাল দশটা এগারোটার পর রোদপুর ভেঙেপড়ল তখন যেন একটা নতুন জিনিষ দেখে মনে অপূৰ্ব্ব বিস্ময়ের উদয়হল । দিনটি বড় চমৎকার হয়েছিল। আমি দুপুরবেলায় মানাহারের পর বারান্দার সামনে একটি আরামকেদারার উপরে পা ছড়িয়েদিয়ে অৰ্দ্ধশয়ানঅবস্থায় জাগ্রৎস্বপ্নে নিযুক্ত ছিলুম। আমার চোখের সামনে আমাদের বাড়ির কম্পাউণ্ডের কতকগুলি নারকেল গাছ,—তার উদিকে যতদুর দৃষ্টি যায় কেবলি শস্যক্ষেত্র, শস্যক্ষেত্রের একেবারে প্রাস্তভাগে গাছপালার একটুখানি ঝাপসা নীল আভাসমাত্র । ঘুঘু ডাকচে এবং মাঝেমাঝে গোরুর গলার নুপুর শোনাযাচ্চে । কাঠবিড়ালী একবার ল্যাজের উপর ভর দিয়ে বসে মাথা তুলে চকিতের মধ্যে অদৃশু হচ্চে । খুব একটা নিঝুম নিস্তন্ধ নিরালা ভাব । বাতাস অবাধে হু হু করে বয়ে আসচে–নারকেল গাছের পাতা ঝর ঝর শব্দকরে কঁপিচে । দুচারজন চাষা মাঠের একজায়গায় জটলাকরে ধানের ছোটছোট চারা উপড়েনিয়ে মাটি করেকরে ৰাধচে। কাজকর্মের মধ্যে এইটুকু কেবল দেখাযাচ্চে ।