পাতা:ছিন্নপত্র-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিলাইদহ, সোমবার, ৬ই জানুয়ারী, > ケ> ミ l সন্ধ্যা হয়ে গেছে । গরমের সময় যখন বোটে ছিলুম, এই সময়ট বোটের জানলার কাছে বসে আলো নিবিয়েদিয়ে চুপচাপ পড়েথাকতুম, নদীর শব্দে, সন্ধ্যার বাতাসে, নক্ষত্রভরা আকাশের নিস্তব্ধতায় মনের সমস্ত কল্পনা মধুর আকার ধরে আমাকে ঘিরে বস্ত, অনেক রাতপৰ্য্যন্ত একপ্রকার নিবিড় নির্জন আনন্দে কেটেযেত । শীতকালের সন্ধ্যাবেলায় সমস্ত প্রকৃতিকে বাইরে ফেলে জানলাদরজা বন্ধ করে বোটের এই ক্ষুদ্র কাষ্ঠময় গহবরের মধ্যে একটি বাতি জেলে মনটাকে তেমন দৌড় দিতেপারিনে— যেন নিজের সঙ্গে নিজেকে বড় বেশি ঘেঁসাৰ্ঘেসি ঠাসাঠাসিকরে থাকতেহয়। এরকম অবস্থায় আপনার মনটিকে নিয়েথাকা বড় শক্ত । সাহিত্যের মধ্যে দুটিমাত্র গল্পের বই এনেছিলুম, কিন্তু এম্নি আমার পোড়া কপাল, আজ বিদায়নেবার সময় সাহেবের মেম সেই দুটি বই ধারনিয়ে গেছেন, কবে শোধ করবেন তার কোন ঠিকানা নেই। সেই দুটাে হাতে তুলেনিয়ে সলজ্জ কাকুতির ভাবে আরম্ভকরলেন “মিষ্টার টাগোর, বুড ইয়ু”– কথাটা শেষ করতে না করতে আমি খুব সজোরে ঘাড়নেড়ে বলুম “সার্টেনলি!” এতে কতটা দূর কি বোঝায় ঠিক বলতে পারিনে । আসলে, তারা তখন বিদায়নিচ্ছিলেন সেই উৎসাহে আমি আমার অৰ্দ্ধেক রাজত্ব দিয়েফেলতে পারতুম ( যে পেত তার যে খুব বেশি লাভহত তা নয় ) যাহোক তারা আজ গেছে—আমার এই দুটোদিন একেবারে ঘুলিয়েদিয়ে গেছে—আবার থিতিয়েনিতে দুদিন যাবে—মেজাজটা এম্নি খারাপ হয়েআছে যে ভয়েভয়ে আছি পাছে কাউকে অন্যায় অকারণে তাড়নাকরে উঠি—এত বেশি সাবধানে আছি যে সহজ অবস্থায় যখন একজনকে ধমক দিতুম এখন তাকে খুব নরমনরমকরে বলুচি—মেজাজ বিগড়েগেলে অনেকসময় আমার এইরকম উণ্টোরকম ব্যাপার হয়—সে সময়ে ছেলের কাছে থাকলে ভয়হয় পাছে তাদের লঘুদোষে গুরুদণ্ড দিই, এইজষ্ঠে তাদের দণ্ডই দিইনে—খুৰ দৃঢ় করে সহিষ্ণুতা অবলম্বনকরে থাকি । |