৮ই এপ্রিল, ১৮৯২।
এখানে এসে আমি এত এলিমেণ্টস্ অফ্ পলিটিক্স্ এবং প্রব্লেম্স্ অফ্ দি ফ্যুচার পড়্চি শুনে বোধহয় খুব আশ্চর্য্য ঠেক্তে পারে। আসল কথা, ঠিক এখানকার উপযুক্ত কোন কাব্য নভেল খুঁজে পাইনে। যেটা খুলেদেখি সেই ইংরাজি নাম, ইংরাজি সমাজ, লণ্ডনের রাস্তা এবং ড্রয়িংরুম, এবং যতরকম হিজিবিজি হাঙ্গাম। বেশ শাদাসিদে সহজ সুন্দর উন্মুক্ত এবং অশ্রুবিন্দুর মত উজ্জ্বল কোমল সুগোল করুণ কিছুই খুঁজে পাইনে। কেবল প্যাঁচের উপর প্যাঁচ, অ্যানালিসিসের উপর অ্যানালিসিস—কেবল মানবচরিত্রকে মুচ্ড়ে নিংড়ে কুঁচ্কে মুচ্কে, তাকে সজোরে পাক দিয়েদিয়ে তারথেকে নতুন নতুন থিওরি এবং নীতিজ্ঞান বেরকরবার চেষ্টা। সেগুলো পড়তেগেলে আমায় এখানকার এই গ্রীষ্মশীর্ণ ছোট নদীর শান্তস্রোত, উদাস বাতাসের প্রবাহ, আকাশের অখণ্ড প্রসার, দুইকুলের অবিরল শান্তি এবং চারিদিকের নিস্তব্ধতাকে একেবারে ঘুলিয়ে দেবে। এখানে পড়বার উপযোগী রচনা আমি প্রায় খুঁজে পাইনে, এক বৈষ্ণব কবিদের ছোটছোট পদ ছাড়া। বাংলার যদি কতকগুলি ভালভাল মেয়েলি রূপকথা জান্তুম এবং সরলছন্দে সুন্দরকরে ছেলেবেলাকার ঘোরো-স্মৃতি দিয়ে সরসকরে লিখ্তে পারতুম তাহলে ঠিক এখানকার উপযুক্ত হত। বেশ ছোট নদীর কলরবের মত, ঘাটের মেয়েদের উচ্চহাসি মিষ্ট কণ্ঠস্বর এবং ছোটখাট কথাবার্ত্তার মত, বেশ নারকেলপাতার ঝুর্ঝুর্ কাঁপুনি, আমবাগানের ঘনছায়া, এবং প্রস্ফুটিত সর্ষেক্ষেতের গন্ধের মত বেশ শাদাসিধে অথচ সুন্দর এবং শান্তিময়—অনেকখানি আকাশ আলো নিস্তব্ধতা এবং করুণতায় পরিপূর্ণ। মারামারি হানাহানি যোঝাযুঝি কান্নাকাটি সে সমস্ত এই ছায়াময় নদীস্নেহবেষ্টিত প্রচ্ছন্ন বাংলাদেশের নয়। যাইহোক্, এলিমেণ্ট্স্ অফ্ পলিটিক্স জলেরউপরে তেলের মত এখানকার নিস্তব্ধ শান্তির উপরদিয়ে অবাধে ভেসে চলেযায়, এ’কে কোনরকমে নাড়াদিয়ে ভেঙেদেয় না।