পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সপ্তবিংশ পরিচ্ছেদ
১২৩

সপ্তবিংশ পরিচ্ছেদ

অঙ্কুর-বিকাশ

 প্রাতঃকালে মন্দ মন্দ সমীরণ ভরে কম্পিত হইতে হইতে একখানি সুদৃশ্য বজরা গঙ্গাবক্ষঃ তরঙ্গিত করিয়া চলিতেছিল। বজরার দুইটি কামরা, একটি কামরায় পার্শ্বস্থ উচ্চ তক্তার উপর একটি পীড়িতা রমণী শয্যাশায়ী, নিকটে দুইজন পুরুষ দুইখানি চৌকিতে আর নীচে পদপার্শ্বে একজন দাসী বসিয়া। ইহাদের মধ্যে যিনি যুবা তিনি প্রৌঢ় ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করিলেন “আজ কেমন দেখছ? ভরসা হয়?” উত্তর পাইলেন। “এ দুদিনের চেয়ে আজ কিছু ভাল, তবে আরো চার দিন না গেলে ঠিক বলা যায় না।”

 দিন যাইতে লাগিল; যুবা প্রায় সর্ব্বদাই রমণীর নিকট রহিয়াছেন, আবশ্যক না হইলেও ক্ষণে ক্ষণে নাড়ী টিপিয়া দেখিতেছেন, ক্ষণে ক্ষণে কপালের উষ্ণতা অনুভব করিতেছেন এবং “রমণী এখন কেমন আছেন?” এই কথা জিজ্ঞাসা করিয়া মাঝে মাঝে চিকিৎসককে বিরক্ত করিয়া তুলিতেছেন, অথচ চিকিৎসকের সাহস বাক্যে তাঁহার কিছুতেই প্রত্যয় জন্মিতেছে না। যখন অন্য কোন কাজ নাই, তখন যুবা রমণীর সেই অজ্ঞান সুষুপ্ত মুখের দিকে চাহিয়াই আছেন, তাহার সেই অর্দ্ধনিমীলিত পদ্ম-কোরক-সদৃশ নয়নযুগলের দিকে চাহিয়াই আছেন, পলকহীন স্থির দৃষ্টিতে বিষণ্ণ ভাবেই চাহিয়া আছেন, দেখিয়া তাঁহার কি তৃপ্তি হইতেছে তিনিই জানেন।

 যুবক আর কেহ নহেন আমাদের পূর্ব্বপরিচিত হিরণকুমার।

 হিরণকুমার কিছু দিন হইতে পশ্চিম অঞ্চলে আবগারী তদারক কার্য্য