পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চতুস্ত্রিংশ পরিচ্ছেদ
১৬১

চতুস্ত্রিংশ পরিচ্ছেদ

মেঘে বিজলি

 হিরণকুমারের চারি দিন ফুরাইয়া আসিয়াছে, কাল তাঁহাকে এলাহাবাদ ছাড়িতে হইবে। তিনি মধ্যাহ্নে অন্যান্য চিঠিপত্র শেষ করিয়া কনককে একখানি চিঠি লিখিতে বসিয়াছেন। কতবার লিখিলেন কতবার ছিঁড়িলেন,—অবশেষে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হইয়া একখানি চিঠি শেষ করিয়া নীরবে অশ্রুজল মুছিতে লাগিলেন। দেখিতে দেখিতে সে অশ্রু শুকাইল, মুখে দৃঢ়তাব্যঞ্জক ভাব প্রকটিত হইল, তিনি উঠিয়া চিঠিখানি নিজে ডাকে দিয়া বাটী ফিরিলেন। গঙ্গাতীরের একটী সরকারী বাড়ীতে আপাততঃ তিনি বাস করিতেছিলেন।—যখন গৃহে ফিরিলেন তখনও সন্ধ্যা হয় নাই, উজ্জল আকাশ প্রান্তে সবে মাত্র দুই একটি তারকা ফুটিয়া উঠিয়াছে, তিনি বারান্দার একখানি ইজিচেয়ারে শুইয়া আকাশের সেই অস্তমান্ শেষ উজ্জ্বলতার দিকে কিছুক্ষণ নির্ণিমেষ নেত্রে চাহিয়া চাহিয়া চক্ষু মুদ্রিত করিলেন। সন্ধ্যা হইল, হিরণকুমার উঠিলেন না, ভৃত্য নীরবে দেয়ালের ধারে লিখিবার টেবিলে একটি আলো রাখিয়া গেল। রাত্রি হইল, আটটা বাঞ্জিল, হিরণকুমার উঠিলেন না, থাবার আনিতেও হুকুম দিলেন না,—বেগতিক দেখিয়া একজন ভৃত্য খবর দিল, খাদ্য প্রস্তুত। ভৃত্যের নিকট ইহা আজ নূতন ব্যাপার নহে। কয়েক দিন হইতে আহার সম্বন্ধে প্রভুর সে এইরূপ বীতরাগ দেখিতেছে। এতক্ষণ হিরণকুমার ঘুমাইতেছিলেন কি না জানিনা, কিন্তু ভৃত্যের কথায় চোখ খুলিয়া একবার তাহার দিকে চাহিলেন। তাঁহার সেই যন্ত্রণা-প্রকটিত পাংশুবর্ণ মুখ, তাঁহার সেই কোন ভয়ানক দৃঢ়সঙ্কল্প-