পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় পরিচ্ছেদ
১৫

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

বিজন কুটীর

 অরণ্যপ্রান্তে নদীর অনতিদূরে অনুচ্চ বিজন মন্দির। মন্দিরসংলগ্ন দীর্ঘ দালান যাত্রীনিবাস। যুবতী পথিকদিগকে লইয়া এইখানে সমাগত হইল! দালানের নিভৃত একটি কোলঙ্গায় দ্বিসলিতা প্রদীপ জ্বলিতেছিল; সেই দাপালোকবিভাসিত প্রফুল্ল কুসুমসদৃশ সহাস্য রমণীমূর্ত্তি দেখিয়া, তাঁহারা দ্বিতীয়বার যেন মোহমুগ্ধ হইয়া পড়িলেন। দীপালোকে বালিকার রূপকান্তি অধিকতর সুস্পষ্টভাবে তাঁহাদের নয়নে প্রতিভাত হইল! বালিকা যথার্থই বনবালা, সে মুখে যুবতীস্বভাবসুলভ লজ্জা নাই, সে মুখে বিলাসময় ভাবভঙ্গী কিছু মাত্র নাই; তাহা বালিকার উপযুক্ত ঈষৎ সরল হাস্যে মাত্র প্রফুল্ল।—তাঁহারা নীরবে বিস্মিতনেত্রে সেই বিজন মন্দিরবাসিনী বনদেবীর প্রতি চাহিয়া রহিলেন।

 মন্দিরে অন্য কোন যাত্রী সে দিন ছিলনা। দুইজন ভৃত্য দালানে বসিয়া ছিল,—বালিকাকে দেখিয়া সসম্ভ্রমে উঠিয়া দাঁড়াইল, এবং তাহার আজ্ঞাক্রমে একজন তাঁহাদের মুখহাত ধুইবার জল আনিতে গেল— অন্যজন মন্দিরব্রাহ্মণ,—তিনি পথিকদিগের আহারের আয়োজন করিতে গেলেন। —দাস জল আনিলে বালিকা পথিকদিগকে বলিল,— “আপনারা অস্ত্র শস্ত্র রেখে মুখ হাত ধুন, আমি খাবার আনি।” বলিয়া সে মন্দির পার্শ্বস্থ রন্ধনগৃহে প্রবেশ করিল,—এবং অনতিবিলম্বে ব্রাহ্মণের সহিত খাদ্যাদি আনিয়া পরিবেশনতৎপর হইল। ভৃত্য পূর্ব্বেই আসন ও ভোজনপাত্রাদি দালানে ঠিক করিয়া রাখিয়াছিল। পথিক দুইজন ভোজনে বসিলেন। যামিনী তৃপ্তি পূর্ব্বক মন্দিরভোগ উপভোগে প্রবৃত্ত হইলেন।—প্রমোদ