পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/১৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সপ্তত্রিংশ পরিচ্ছেদ
১৭৯

আবার তার উপর এই অপবাদ! কনক পোড়ারমুখী কি প্রমোদকে কষ্ট দিতেই জন্মিয়াছিল? কনকের উপর এতক্ষণ যে মমতাটুকু সে অনুভব করিতেছিল এই কথায় তাহা একেবারেই লোপ পাইয়া গেল। সে ক্রুদ্ধ হইয়া ভাবিল, বোটে গিয়াই এ কথা আগে স্বামীকে বলিরা, ইহার একটা প্রতিকার বিধান করিবে!

 একে একে তাঁহারা বোটে উঠিলেন,—কনক দাঁড়াইয়া দেখিতে লাগিল; যখন বোট ছাড়িয়া দিল, তাঁহারা দৃষ্টিপথের অতীত হইয়া পড়িলেন, তখন কনক ঘরে আসিয়া কাঁদিতে লাগিল।


সপ্তত্রিংশ পরিচ্ছেদ

ছিন্নতন্ত্রী

 ক্রমে অপরাহ্ন কাল আগত; অল্প অল্প মেঘ করায় বৈকালেই সন্ধ্যা সন্ধ্যা বোধ হইতেছে। বাতাস বেশী না থাকায় নদী এখন প্রশান্ত, নিস্তব্ধ, তাহাতে তরঙ্গ-উচ্ছাস নাই। নিঃশব্দে জাহ্নবী নদী মুমূর্ষু ব্যক্তির জীবনাশার ন্যায় বহিয়া যাইতেছে।

 নদীর ধারে বারান্দায় বসিয়া কনক একখানি পত্র পড়িতেছিল। পত্রখানি হিরণের। কিছু পূর্ব্বে পত্রখানি কনক পাইয়াছে। কনকের মুখখানি কি মলিন, কি বিষণ্ণ! দৃষ্টি কি ঘোরতর যন্ত্রণাব্যঞ্জক, অথচ শূন্যময়, যেন কি দেখিতেছে কি পড়িতেছে সে জানে না, কেবল তাহাতে একটি অসহা বেদনা অনুভব করিতেছে মাত্র। কনক চিঠিখানি দুই একবার মনে মনে পড়িল, তাহাতে যেন ভাল করিয়া বুঝিতে না পারিয়া আর একবার মৃদু-উচ্চারণে পড়িতে আরম্ভ করিল,—