“তবে আমরা আসি, এ উপকার কখনো ভুল্ব না। যদি আমাদের মত নিরাশ্রয়কে আর কখনো আশ্রয় দেন তো তখন এই পথিকদের কথা মনে করবেন।”
বালিকা কোন উত্তর করিল না, স্থির নেত্রে প্রমোদের দিকে চাহিয়া রহিল। যামিনীকে প্রমোদ বলিলেন “তবে চল যাওয়া যাক্।”
যামিনী নীরজার দিকে চাহিয়া “তবে আসি,” এই কথা ব্যতীত কিছুই বলিলেন না, রমণীও ইহার কোন উত্তর করিল না, সে যেন তখন কি ভাবনায় মগ্ন ছিল। প্রমোদ আর একবার প্রশান্ত নয়নে তাহার দিকে চাহিয়া সেখান হইতে গমন করিলেন।
চতুর্থ পরিচ্ছেদ
মোহ-মুগ্ধ
যুবকেরা বাড়ী ফিরিয়া আসিলেন, কিন্তু অন্য দিনের ন্যায় সে দিন পরস্পরে কথোপকথন চলিল না। দু’জনেই আপন মনে থাকিয়া প্রায় নিস্তব্ধ ভাবেই দিন কাটাইলেন। আশ্চর্য্য! পূর্ব্বদিনকার ঘটনার কথা লইয়া কোথায় দু’জনের গল্প থামিবে না, না দু’জনেই আজ নিস্তব্ধ, দুজনেই চিন্তামগ্ন। কিন্তু কেহ মনোনিবেশ পূর্ব্বক উভয়কে দেখিলে বুঝিতেন যে তাঁহাদের সেই নিস্তব্ধ মুখমণ্ডল পরস্পর কেমন ভিন্ন-ভাবব্যঞ্জক। প্রমোদ গম্ভীর, প্রশান্ত, যেন বহির্জগতের সহিত তাঁর কোন সম্পর্কই নাই, তাঁহার দৃষ্টি লক্ষ্যশূন্য, মুখে প্রফুল্লতা নাই; আর যামিনীনাথের অধীর ঘন ঘন দীর্ঘনিশ্বাসে যেন অনল বহিতেছে, কখনও কখনও কিসের ভাবে কে জানে তাঁহার ওষ্ঠাধর আহ্লাদে কাঁপিয়া উঠিতেছে, আবার কখনও যেন আপনাআপনি ভ্রুযুগল কুঞ্চিত হইয়া পড়িতেছে।