পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৮
ছিন্নমুকুল

পক্ষে শাস্তির পরাকাষ্ঠা হইবে। রাত্রিকালে যাইবার সময় প্রমোদ সুশীলাকে জিজ্ঞাসা করিলেন “কনক আজ কোথায়? তাকে আজ অনেকক্ষণ দেখি নি, আমার আবার যাবার সময় হয়ে এল, এখনো যে তার দেখা নেই?” সুশীলা বলিলেন, “সে আজ দোষ করেছে, শাস্তি স্বরূপ তাকে বন্ধ রেখেছি।” প্রমোদ শুনিয়া একটু ক্ষুণ্ণ হইলেন এবং বিমর্ষভাবে বাড়ী হইতে যাত্রা করিলেন। কিন্তু গাড়ীতে গিয়া সে কথা ভুলিয়া গেলেন।



অষ্টম পরিচ্ছেদ

হরিণী-জালে

 সন্ন্যাসী নৈমিষারণ্যে গিয়াছেন। নীরজা মন্দির হইতে কিয়দ্দূরে পাথরবাঁধান বকুল-তলে বসিয়া, ৩০/৩২ বয়স্ক একটি কৃষ্ণবর্ণ স্থূলকায় স্ত্রীলোকের সহিত হিন্দুস্থানী ভাষায় গল্প করিতেছিল। গাছের ফাঁকে ফাঁকে অস্ফুট জ্যোৎস্না আসিয়া পড়িয়া বকুল-তলাটি ঈষৎ উজ্জ্বল হইয়াছিল, মৃদু মৃদু বাতাস বহিতেছিল, সেই বাতাসে একটি একটি করিয়া বকুল খসিয়া বৃক্ষতল ছাইয়া ফেলিয়াছিল।

 নীরজা সেই ফুলরাশির মধ্য হইতে কতকগুলি ফুল হস্তে লইয়া খেলিতে খেলিতে তাহার গল্প শুনিতেছিল। স্ত্রীলোকটি তাহার ঘরকন্নার কথা, দুঃখধান্ধার কথা, তাহার পুত্রকন্যার কথা বলিতেছিল, নীরজা কৌতূহলের সহিত তাহা শুনিতে শুনিতে মাঝে মাঝে দুই একটি প্রশ্ন করিতেছিল। কাঠুরিয়া রমণীর নববিবাহিতা কন্যার কথা শুনিয়া নীরজা বলিল “বসু, আজ তাকে সঙ্গে আনলে না কেন?”