পাতা:ছিন্নমুকুল - স্বর্ণকুমারী দেবী.pdf/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০
ছিন্নমুকুল

একাদশ পরিচ্ছেদ

বিস্ময়

 যামিনীনাথ ভবানীপুরে এক জন ধনশালী যুবা। তিনি চতুর্ব্বিংশ বর্ষীয়। শরীর কিছু কৃশ, মুখাবয়বও সর্ব্বাঙ্গসুন্দর নহে, কিন্তু বর্ণ গৌর এবং দেখিতে কুরূপ নহেন। ললাট প্রশস্ত না হউক, নিতান্ত ক্ষুদ্র নহে, চক্ষু আয়ত, কিন্তু দৃষ্টি তত সরল নহে বলিয়া চক্ষুর তেমন সৌন্দর্য্য নাই; নাসিকা সুবঙ্কিম, তাহা কার্য্যতৎপরতার চিহ্ন।

 মাতা ও এক বৃদ্ধা জ্যেষ্ঠতাতপত্নী এবং একমাত্র ভগিনী ছাড়া যামিনীনাথের আর কেহ নাই। যামিনীর অষ্টাদশ বর্ষ বয়ঃক্রমের সময় তাঁহার পিতার মৃত্যু হয়। এই অল্প বয়সে সমস্ত বিভবের অধিপতি হইয়া তাঁহার মস্তক কিছু ঘুরিয়া গিয়াছিল; পিতার মৃত্যুর পরেই তিনি স্কুল ছাড়িয়া দেন। সেই অবধি পুস্তকের সহিত তাঁহার সম্পর্ক রহিত। যেমন হইয়া থাকে, কতকগুলি চাটুকার লইয়া, কতকগুলি সঙ্গী বন্ধুবান্ধব লইয়া তিনি সময় কাটাইতে লাগিলেন। তিনি ন্যায়ান্যায় যে কাজই করুন, চাটুকারগণ তাহাতেই তাঁহার গুণ কীর্ত্তন করিতে থাকে। যামিনীনাথ যে তাহাদের অন্যায় প্রশংসা বোঝেন না তাহা নহে, তিনি বিলক্ষণ বুদ্ধিমান, কিন্তু বুঝিয়াও তিনি তাহাতে সন্তুষ্ট বই অসন্তুষ্ট হন না। যামিনীর হাত বিলক্ষণ দরাজ। প্রশংসা পাইবার নিমিত্ত চাটুকারদিগকে তুষ্ট করিতে, মানের জন্য বন্ধুদের কথা রাখিতে, নাম কিনিবার জন্য গবর্ণমেণ্টকে দান করিতে, তিনি কুণ্ঠিত ছিলেন না। একে পিতার অনেক ধন, তাহাতে যামিনীর জ্যেষ্ঠতাতপত্নী আপন পিতার যে পাঁচলক্ষ টাকা পাইয়াছিলেন, যামিনীনাথ সে টাকারও ভাবী অধিপতি হইবেন আশা ছিল, কেন না জ্যেষ্ঠতাত-