পাতা:ছুটির পড়া - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাজের লোক কে 있 দিলেন, “এক গায়ে মুন কিনিয়া আর-এক গায়ে বিক্রয় করিয়া আইস ।” নানক টাকা লইয়া বালসিন্ধু চাকরকে সঙ্গে করিয়া মুন কিনিতে গেলেন । এমন সময় পথের মধ্যে কতকগুলি ফকিরের সঙ্গে নানকের দেখা হইল । নানকের মনে বড়ো আনন্দ হইল । তিনি ভাবিলেন, এই ফকিরদের কাছে ধর্মের বিষয় জানিয়া লইবেন । কিন্তু কাছে গিয়া যখন তাহাদিগকে কথা জিজ্ঞাসা করিলেন তখন তাহারা কথার উত্তর দিতে পারে না । তিন দিন তাহারা খাইতে পায় নাই ; এমনি দুর্বল হইয়া গিয়াছে যে, মুখ দিয়া কথা সরে না । নানকের মনে বড়ো দয়া হইল। তিনি কাতর হইয়া তাহার চাকরকে বলিলেন, “আমার বাপ কিছু লাভের জন্য আমাকে মুনের ব্যাবসা করিতে হুকুম দিয়াছেন। কিন্তু এ লাভের টাকা কত দিনই বা থাকিবে । তুই দিনেই ফুরাইয়া যাইবে । আমার বড়ো ইচ্ছ। হইতেছে, এই টাকায় এই গরিবদের দুঃখ মোচন করিয়া যে লাভ চিরদিন থাকিবে সেই পুণ্য লাভ করি।” বালসিন্ধু কাজের লোক ছিল বটে, কিন্তু নানকের কথা শুনিয়া তাহার মন গলিয়া গেল। সে কহিল, “এ বড়ো ভালো কথা।” নানক তাহার ব্যাবসার সমস্ত টাক। ফকিরদের দান করিলেন । তাহারা পেট ভরিয়া খাইয়া যখন গায়ে জোর পাইল তখন নানককে ডাকিয়া ঈশ্বরের কথা শুনাইল। তাহার নানককে বুঝাইয়া দিল— ঈশ্বর কেবল একমাত্র আছেন, আর সমস্ত তাহারই সৃষ্টি । এ-সকল কথা শুনিয়া নানকের মনে বড়ো আনন্দ श्ञ । তাহার পরদিন নানক বাড়ি ফিরিয়া আসিলেন। কালু জিজ্ঞাসা করিলেন, “কত লাভ করিলে।” নানক বলিলেন, “বাবা, আমি গরিবদের খাওয়াইয়াছি । তোমার এমন ধন লাভ হইয়াছে যাহ। চিরদিন থাকিবে ।” কিন্তু সেরূপ ধনের প্রতি কালুর বড়ো একটা লোভ ছিল না। সুতরাং তিনি রাগিয়া ছেলেকে মারিতে লাগিলেন। এমন সময়ে সে প্রদেশের ক্ষুদ্র রাজা পথ দিয়া যাইতেছিলেন।