পাতা:ছুটির পড়া - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Aðe ছুটির পড়া করিয়াছিলেন। কিন্তু নানক তাহাতে ভুলিবেন কেন । উলটিয়া তিনি রাজাকে ধর্মের দিকে আকর্ষণ করিলেন । মোগল-সম্রাট বাবরের সঙ্গে একবার নানকের দেখা হয় । সম্রাট নানকের সাধুভাব দেখিয়া সন্তুষ্ট হইয়। র্তাহাকে বিস্তর টাকা পুরস্কার দিতে চাহিয়াছিলেন, কিন্তু নানক তাহা লইলেন না । তিনি বলিলেন, “যে জগদীশ্বর সকল লোককে অন্ন দিতেছেন, অনুগ্রহ ও পুরস্কার আমি তাহারই কাছ হইতে চাই, আর কাহারে কাছে চাই না।” নানক যখন মক্কায় বেড়াইতে গিয়াছিলেন, তখন একদিন তিনি মসজিদের দিকে প৷ করিয়া ঘুমাইতেছিলেন। তাহ দেখিয়া একজন মুসলমানের বড়ো রাগ হইল। সে র্তাহাকে জাগাইয়া বলিল, “তুমি কেমন লোক হে! ঈশ্বরের মন্দিরের দিকে পা করিয়া তুমি ঘুমাইতেছ!” নানক বলিলেন, “আচ্ছা ভাই, জগতের কোন দিকে ঈশ্বরের মন্দির নাই একবার দেখাইয়া দাও দেখি ” নানক লোক ভুলাইবার জন্ত কোনো আশ্চর্য কৌশল দেখাইয়া কখনো আপনাকে মস্ত লোক ৰলিয়া প্রচার করিতে চাহেন নাই। গল্প আছে, একবার কেহ র্তাহাকে বলিয়াছিল, “আচ্ছা, তুমি তো একজন মস্ত সাধু— আমাদিগকে একটা কোনো আশ্চর্য অলৌকিক ঘটনা দেখাও দেখি ” নানক বলিলেন, “তোমাদিগকে দেখাইবার যোগ্য আমি কিছুই জানি না। আমি কেবল পবিত্র ধর্মের কথা জানি, আর কিছুই জানি না। ঈশ্বর সত্য, আর সমস্ত অস্থায়ী ।” নানক অনেক দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করিয়া দেশে ফিরিয়া আসিয়া গৃহস্থ হইলেন । গৃহে থাকিয়া তিনি সকলকে ধর্মোপদেশ দিতেন । তিনি কোরান-পুরাণ কিছুই মানিতেন না । তিনি সকলকে ডাকিয়৷ ৰলিতেন, “এক ঈশ্বরকে পূজা করে, ধর্মে মন দাও, অন্ত সকলের দোষ মার্জন করে, সকলকে ভালোবাসে৷ ” এইরূপে সমস্ত জীবন ধর্মপথে থাকিয়া সকলকে ধর্মোপদেশ দিয়া সত্তর বৎসর বয়সে নানকের মৃত্যু হয় ।