পাতা:ছুটির পড়া - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সূর্যের কথা , \OS) বধিয়া রাখিলে তবে সূর্যের ব্যাসরেখ পূর্ণ হয়। ছবিতে ঐ যে সূর্যের পেটের উপরে পুতির মালার মতো আঁকা আছে, উহার এক-একটি পুতি অর্থাৎ এক-একটি বিন্দু এক-একটি পৃথিবী। ঐ মালায় ১০৬টি পৃথিবী আছে। সূর্যের সমস্ত আয়তন কত বড়ো যদি জানিতে চাও তাহা হইলে তাহাকে একটা ফঁাপা গোলার মতো মনে করে এবং তার পর দেখো কতগুলি পৃথিবী হইলে তাহার পেট ভরে । দশ লক্ষ একত্রিশ হাজারটা পুথিবী ইহার মধ্যে অক্লেশে ধরিতে পারে। আমাদের পেটে এতগুলো তিল ধরে কি না সন্দেহ । সূর্য যে কত বড়ো তাহা বুঝিলাম। কিন্তু ইহার আলোক ও উত্তাপের পরিমাণ যে কত তাহা মনে ধারণা করা এক প্রকার অসম্ভব । মনে করিয়া দেখো সূর্যের সমস্ত কিরণের মধ্যে কত অল্পটুকুই আমাদের এই ক্ষুদ্র পৃথিবীর উপর পড়িতেছে, অথচ বৈশাখ মাসে ইহাই আমাদের কাছে কী প্রখর বোধ হয়। ঘরের মধ্যে যে প্রদীপ জ্বলিতেছে তাহার অালোক চারি ধারে ছড়াইয়া পড়িয়াছে। ক্ষুদ্র এক সরিষা আনিয়া প্রদীপের কিছু দূরে ধরিলে কতটুকু আলো সেই সরিষার উপরে পড়ে তুলনা করিলে আমাদের পৃথিবীর উপরেও ততটুকুই সূর্যের আলো পড়ে এবং তাহতেই পৃথিবীর সমস্ত কার্য চলিয়া যায়। সূর্যকিরণের প্রখরতা যদি পরীক্ষা করিতে চাও তাহ হইলে অতিশ কাচের সাহায্যে সহজে করিতে পারে । অতিশ কাচ সূর্যের সম্মুখে ধরিলে তাহার কিরণ সেই কাচের মধ্য দিয়া বাহিরে আসিয়া বিন্দু-আকারে মিলিত হয়, সেই জায়গায় এক টুকরা কাগজ রাখিলে তাহা জ্বলিয়া উঠে । তবু সূর্যকিরণের সমস্ত দৌরাত্ম্য আমাদিগকে সহিতে হয় না। সূর্যের উত্তাপে জলের কণা বাতাসে ছড়াইয়া পড়ে, তাহাতে করিয়া বাতাস অনেকটা ঠাণ্ড রাখে, তাহা না হইলে সূর্যকিরণের জ্বালায় পুথিবীতে আমাদের টেকা দায় হইত।