পাতা:ছুটির পড়া - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দাজিলিং-যাত্রা Qፃ চাহিয়া দেখি, আমরা পাহাড়ের উপরে। কখনো দক্ষিণে প্রকাও পাহাড়, বামে খদ, কখনো-বা দক্ষিণে খদ ও বামে পাহাড় । ট্রামের রাস্ত মস্ত সাপের মতো পাহাড়কে ঘিরিয়া অল্প অল্প উচ্চ হইয়া উপরে উঠিয়াছে। এরূপ ঘুরিতে ঘুরিতে চলিলাম। মাঝে মাঝে স্টেশন আছে। প্রথম স্টেশন তিনদরিয়া শিলিগুড়ি হইতে নয় ক্রোশ, এখানে ট্রেন পনেরো মিনিট থাকে । তিনদরিয়া হইতে যখন গাড়ি ছাড়িল তখন চতুর্দিকে মেঘ ঘন কুয়াশার মতো সাদা হইয়া চারি দিক ঘিরিয়া রহিয়াছে। মেঘের ভিতর দিয়া গাড়ি চলিতে লাগিল। আশেপাশের ঘরবাড়ি ছাড়া দূরের কিছু দেখা যায় না, সমস্ত মেঘে ঢাকা । এক ক্রোশ উপরে যখন গাড়ি উঠিল, তখন ঝমাম করিয়া বৃষ্টি পড়িতে লাগিল। বৃষ্টি হইতেছে, মেঘ ঈষৎ কাটিয়া আসিতেছে ; নীচের পাহাড়ে চাহিয়া দেখি, সেখানে দিব্য রৌদ্র ফুট্‌ফুট্‌ করিতেছে। এইরূপ আশ্চর্য দৃশ্য দেখিতে দেখিতে মনে হইল, পৃথিবী ছাড়িয়া উপরে স্বর্গের পথে যাইতেছি । প্রায় কুড়ি মিনিট পরে গয়াবাড়ি স্টেশনে পৌছিলাম। এখান হইতে গাড়ি ছাড়িলে নীচের পাহাড়ে কতকগুলি চা-ক্ষেত্র দেখা যায়। দূর হইতে চা-ক্ষেত্রগুলি অতি সুন্দর দেখায় ; মনে হয়, কে যেন পাহাড়ের গায়ে ছোটো ছোটো সবুজ ফোটা পরাইয়া দিয়াছে। তার পর আমরা কার্সিয়ং স্টেশনে পৌছিলাম। পূর্বে এ একটি ক্ষুদ্র পাহাড়েপল্লী ছিল মাত্র, কিন্তু ক্রমে পাহাড়ের সমস্ত স্টেশনের মধ্যে একটি প্রধান শহর হইয়া দাড়াইতেছে। কার্সিয়ং ৪৫০০ ফিট উচ্চ । যখন এখানে পৌছিলাম তখন আমি শীতে কঁাপিতেছি । এর পর সোনাদহ স্টেশন একটি ক্ষুদ্র পল্লী ; কতকগুলি অপরিস্কার বাজার দেখা যায় মাত্র। এখান হইতে ছাড়িয়া ঘুম স্টেশনে পৌছানো গেল। অনেকে বলেন যে পৃথিবীর কোনো পাহাড়ের উপর এত উচ্চে রেলগাড়ি যায় নাই । ইহা ৭৪০০ ফিট উচ্চ। দার্জিলিং এই স্থান হইতে দুই ক্রোশ নীচে, সুতরাং গাড়ি