পাতা:ছুটির পড়া - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 ছুটির পড়া পরাজিত হইয়াছেন এবং আমেরিকের জয়ী হইয়াছে, তখন তিনি করজোড়ে বলিয়া উঠিলেন, “ঈশ্বরকে প্রণাম । এতদিনে যুদ্ধ শেষ হইল, এক্ষণে আমাদের দেশ সুখ-শাস্তি-স্বাধীনতার প্রসাদ উপভোগ করিবে ।” যখন ওয়াশিংটনের নাম জগদ্বিখ্যাত হইল— তাহার গৃহে সৌভাগ্যরবি উদয় হইল, তখনো তাহার মাতার সাদাসিধা অভ্যাস ও র্তাহার সরল গাম্ভীর্যের কিছুমাত্র বৈলক্ষণ্য হয় নাই । সেই তিনি পূর্বেকার ন্যায় গৃহস্থালি কাজে ব্যস্ত থাকিতেন, ঘোড়ায় চড়িয়া আপনার খেত পরিদর্শন করিতেন ; যদিও তাহার টাকাকড়ি বেশি ছিল না তবু মিতব্যয়ী হইয়া পরিশ্রমের সহিত সাংসারিক কাজকর্ম এমন গুছাইয়া করিতেন যে তাহাতে র্তাহার কিছুমাত্র অনটন হইত না, বরং তাহার সঞ্চিত অর্থ হইতে অনেক গরিব কাঙালকে দান করিতেন । ৮২ বৎসর বয়স পর্যন্ত এইরূপ গৃহস্থালি কাজকর্ম করিয়া একটি যৎসামান্ত গৃহে নিজ চরিত্রের স্বাধীনতা ও গৌরব রক্ষা করিয়া বরাবর সমানভাবে চলিয়া আসিয়াছেন । র্তাহার ছেলেরা ও র্তাহার নাতিপুতির আসিয়া বৃদ্ধ বয়সের উপযুক্ত কোনো ভালো গৃহে যাইতে সর্বদা তাহাকে অনুরোধ করিত। কিন্তু তিনি তাহদের এই উত্তর করিতেন, “তোমাদের ভালোবাসা ও ভক্তির পরিচয় পেয়ে তোমাদের উপর আমি সন্তুষ্ট হয়েছি, এই পৃথিবীতে আমার অভাব অতি অল্প, আর আমার নিজের রক্ষণভার অামি নিজেই নিতে পারি।” তাহার জামাতা একবার বলিয়াছিলেন যে সাংসারিক কাজকর্ম-নির্বাহের ভার তাহার উপর দিয়া তিনি নিশ্চিন্ত হউন । তাহাতে তিনি ৰলিলেন, “আমার দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে এসেছে— আমার বইগুলি শুধু আমার হয়ে তুমি গুছিয়ে রেখো, কিন্তু সাংসারিক কাজকর্ম আমিই চালাব।” ওয়াশিংটনের মাতা অত্যন্ত ধর্মনিষ্ঠ ছিলেন । জীবনের শেষাবস্থায় তিনি আর প্রকাশু উপাসনা-মন্দিরে যাইতেন না—