পাতা:ছুটির পড়া - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

•s ছুটির পড়া বিষাদ । মৃত্যুর মৃত্য যেন ফুরাইয়া গেছে, কেবল প্রকাও নাট্যশালার চারি দিকে উৎসবের ভগ্নাবশেষ পড়িয়া আছে। সাড়াশব্দ নাই, প্রাণ নাই, চেতনা নাই, হৃদয়ের তরঙ্গ স্তব্ধ। এক দিকে পর্বতের সুদীর্ঘ ছায়া পড়িয়াছে, এক দিকে চাদের আলো । মাঝে মাঝে পাচ-ছয়ট করিয়া বড়ো বড়ো গাছ কাকড় মাথা লইয়া শাখা-প্রশাখা জটাজট আঁধার করিয়া স্তব্ধ হইয়া দাড়াইয়া আছে। ইন্দ্রকুমার যুদ্ধের সমস্ত সংবাদ পাইয়া যখন যুবরাজকে খুঁজিতে আসিতেছেন, তখন যুবরাজ কর্ণফুলি নদীর তীরে ঘাসের শয্যার উপর শুইয়া আছেন। মাঝে মাঝে অঞ্জলি পুরিয়া জলপান করিতেছেন, মাঝে মাঝে নিতান্ত অবসন্ন হইয়া চোখ বুজিয়া আসিতেছে। দূরে সমুদ্রের দিক হইতে বাতাস আসিতেছে। কানের কাছে কুলকুল করিয়া নদীর জল বহিয়া যাইতেছে । জনপ্রাণী নাই । চারি দিকে বিজন পর্বত দাড়াইয়া অাছে— বিজন অরণ্য বা বfা করিতেছে— আকাশে চন্দ্র একাকী। জ্যোৎস্নালোকে অনন্ত নীলাকাশ পাণ্ডুবর্ণ হইয়া গিয়াছে। এমন সময়ে ইন্দ্রকুমার যখন বিদীর্ণ হৃদয়ে “দাদা” বলিয়া ডাকিয়া উঠিলেন, তখন আকাশ পাতাল যেন শিহরিয়া উঠিল। চন্দ্রনারায়ণ চমকিয়া জাগিয়া “এসো ভাই” বলিয়া আলিঙ্গনের জন্য দুই হাত বাড়াইয়া দিলেন। ইন্দ্রকুমার দাদার আলিঙ্গনের মধ্যে বদ্ধ হইয়া শিশুর মতে কঁাদিতে লাগিলেন । চন্দ্রনারায়ণ ধীরে ধীরে বলিলেন, “আঃ, বাচিলাম ভাই। তুমি আসিবে জানিয়াই এতক্ষণ কোনোমতে আমার প্রাণ বাহির হইতেছিল না। ইন্দ্রকুমার, তুমি আমার উপরে অভিমান করিয়াছিলে, তোমার সেই অভিমান লইয়া কি আমি মরিতে পারি। আজ আবার দেখা হইল, তোমার প্রেম আবার ফিরিয়া পাইলাম— এখন মরিতে আর কোনো কষ্ট নাই।” বলিয়া দুই হাতে র্তাহার তীর উৎপাটন করিলেন । রক্ত ছুটিয়া পড়িল, র্তাহার শরীর হিম হইয়া আসিল—