পাতা:ছুটির পড়া - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সূর্যকিরণের ঢেউ সূর্যকিরণ জিনিসটা কী জিজ্ঞাসা করিলে তোমরা বলিবে— সূর্যকিরণ সূর্যের কিরণ, সূর্যের আলো— আবার কী । সূর্যের কিরণ সম্বন্ধে আরো অনেক কথা জানিবার অাছে। সূর্যের কিরণ সূর্য হইতে আসিয়া পৃথিবী স্পর্শ করে এইজন্যই বোধ করি তাহাকে সূর্যের কর অর্থাৎ সূর্যের হাত বলা হইয়া থাকে। কিন্তু সূর্যকিরণকে ঠিক সূর্যের হাত বলা যায় না। কেন যায় না নীচে লিখিতেছি । মনে করে একটা পুকুরের দুই পারে দুই ঘাট আছে। এক ঘাটে তুমি স্নান করিতেছ, এক ঘাটে আমি স্নান করিতেছি। দূর হইতে তোমাকে আঘাত করিতে হইলে হয় তোমাকে ঢ়িল ছুড়িয়া মারিতে হয়, নয় জলে এমন এক ঝাকানি দিতে হয় যে এ পার হইতে জলের ঢেউ গিয়া ও পারে তোমার গায়ে লাগে । তোমার সঙ্গে আমি যখন কথা কই তখন কী প্রকারে সেই শব্দ তোমার কানে যায়। তখন তো আমার মুখ হইতে কোনো দ্রব্য তোমার কানে ছোড়া হয় না । তখন আমার মুখের কাছে বাতাস নাড়া পাইয়া চঞ্চল হইয়া উঠে— এইরূপে বাতাসে ঢেউ উঠিয়া একটার পর আর-একটা করিয়া শেষে তোমার কানে যে ঢাকের মতো চর্ম আছে তাহাতে আঘাত করে । দূরের দ্রব্যে আঘাত করিবার এই দুই প্রকার উপায় আমরা জানি । প্রথমত কোনো জিনিস ছুড়িয়া এবং আঘাত করিয়া; দ্বিতীয়ত দ্রব্যের প্রতি ঢেউ প্রদান করিয়া— জল ও বাতাসের ঢেউ তাহার উদাহরণ। পণ্ডিত নিউটনের বিশ্বাস ছিল যে সূর্যকিরণ অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা দ্বারা নির্মিত, সূর্য সেই কিরণগুলি আমাদের চোখের উপর ছুড়িয়া আমাদের চোখে অনবরত আঘাত করিতেছে । কণাগুলির আঘাতে আমরা আলো দেখিতে পাই। অনেক দিন পর্যন্ত লোকেরা নিউটনের এই মত সত্য বলিয়া মনে করিত। পরে অবিশ্বাস করে।