পাতা:ছুটির পড়া - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পাঠশালা 輕 ●冰 চণ্ডীমণ্ডপের এক ধারে বেত হাতে বসিয়া আছেন । ছেলেরা আসিতেছে, আর প্রথমে গুরুমহাশয়ের কাছে হাতছড়ি খাইয়া পাততাড়ির ঢাক খুলিয়া ছোটো ছোটো মাত্রগুলি সারি সারি বিছাইয়া বসিতেছে— কেহ-বা বেহাত হইয়া মুড়ি-মুড়কি ছড়াইয়া ফেলিতেছে। গুরুমহাশয়ের চেহারাখানা বড়ো জমকালো। আজকাল ভালো মানুষের চেহারার কথা লিখিতে হইলে গৌরবর্ণ না বলিলে লোকের ভালো লাগে না— কিন্তু গরিব গুরুমহাশয়ের তামাটে রঙ, আর মাথায় ব্রহ্মাণ্ডব্যাপী টাক— চুলের সম্পর্কমাত্র নাই। তা ভালো না লাগিলে কী করিব ; দেহের মধ্যে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন— র্তার মার্জিত পইতা-গাছটি। ছেলেরা কানাকানি করে, রোজ গুরুমহাশয় একটা বেলের আঠা উহাতে লাগাইয়া থাকেন। গুরুমহাশয়ের চেহারায় ছেলেদের প্রধান লক্ষ্য র্তাহার চোখফুটি— গোল গোল লাল চক্ষু। লোকে বলিত, তিনি নাকি গঞ্জিকা সেবন করিয়া থাকেন। যাহা হউক, বেত হাতে গুরুমহাশয় সেই জবাচক্ষু যার উপর স্থাপিত করেন, কিছুতে তার নিস্তার নাই । বোসদের কুমুদ, বয়স তার সবে পাচ বছর, সে বড়ো খুশি হইয়া হাতছড়ি লইতে গেল। গুরুমহাশয়ের অন্যমনস্ক চক্ষুর পূর্ণ জ্যোতি তাহার উপর পড়িল— সে ঠোঁট ফুলাইয়া কাদিয়া ফেলিল । তখন গুরুমহাশয় তাহাকে কোলে লইয়া অাদর করিলেন, *আচ্ছা বল তো, হাতছড়ি নিবি না শক্ষ্যি নিবি।” 轉 কুমুদ বাম হস্তে চক্ষু মুছিতে মুছিতে কান্নার স্বরে বলিল, “শল্ল্যি নেব।” অমনি শু্যামা ও রামা, শঙ্করা, ভুজো— কুমুদের সমবয়সীর দল —জলপান ও লেখা ছাড়িয়া দাড়াইয়া উঠিয়া সমস্বরে আপত্তি করিল— “কেন গুরুমহাশয়, আমরা এলুম আগে, আর কুমে এল পরে, ওর শঙ্ক্যি হবে কেন ।”