পাতা:ছুটির পড়া - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

१३ ছুটির পড়া চলিল। কিন্তু সে রাগিয়া গালি না দিলে শিশুদের আমোদ সম্পূর্ণ হয় না । সুবুদ্ধি-মোধে পিছন দিক হইতে আসিয়া বুড়ির মাথায় ধূলিমুষ্টি ছড়াইয়া দিল। তখন বুড়ি শিশুর দলকে তাড়া করিল এবং তাহাদের পিতৃমাতৃ-উদ্দেশে অভিধানবহির্ভূত অনেক স্বকথা কীর্তিত করিয়া আপনার পথে চলিয়া গেল। এইরূপে ছেলেদের প্রাতঃকালীন বিদ্যালাপ সম্পূর্ণ হইল । মধ্যাহ্নে স্নানাহার করিয়া রামধন ভট্টাচার্য আবার পাঠশালায় আসিয়া বসিলেন– এবার একটি উপাধান সঙ্গে আনিলেন । গুরুমহাশয় বসিয়া হেলান দিয়া পান চিবাইতে চিবাইতে আবার তামাকু সেবন করিতেছিলেন, এমন সময়ে সর্দার-পোড়ো নিধিরাম আসিয়া বলিল যে, ভোলা আর মোধো একজোট হইয়া তালপুকুরের বটগাছে কোকিলের ছানা পাড়িতে গিয়াছে । অমনি নিধে, তারিণী আর দুখিরামের উপর আদেশ হইল, গুরুমহাশয়ের বিশ্রাম করিবার কালে ছোড়া দুটাকে ধরিয়া লইয়া আসুক। সর্দার-পোড়ো তিনজনের সঙ্গে পাঠশালার সকল ছেলে ভাঙিয়া চলিল। সেই চৈত্র মাসের দুপুর-রোদে আমবাগানে ছুটাছুটি করিয়া আম পাড়িবার লোভ সকলের মনে জাগিতেছিল, অতএব ছেলেমহলে ভারি আনন্দ পড়িয়া গেল। এ দিকে শ্ৰীলশ্ৰীযুক্ত রামধন ভট্টাচার্য গুরুমহাশয় নিশ্চিন্তু হইয়া নাসিকাগর্জন করিতে করিতে সেই গোল গোল জবাফুলের ন্যায় চোখদুটি মুদ্রিত করিলেন। ততক্ষণ তালপুকুরের তালবনের ঘন শীতল ছায়ায় গিয়া সেক্রাদের ভোলা সভয়ে চারি দিকে চাহিতেছিল, আবার স্ববুদ্ধি-মোধো নিকটেই প্রকাও বটগাছে উঠিয়৷ ভাবিতেছিল, কোন ডাল দিয়া গেলে কোকিলগুলা তাহাকে দেখিতে পাইবে না । *