পাতা:ছেলেবেলা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

চেতিয়ে রাখতে পারত না। রাত্রি নটা বাজলে ঘুমের ঘােরে ঢুলুঢুলু চোখে ছুটি পেতুম। বাহির মহল থেকে বাড়ির ভিতর যাবার সরু পথ ছিল খড়্‌খড়ির আব্রু-দেওয়া, উপর থেকে ঝুলত মিটমিটে আলাের লণ্ঠন। চলতুম আর মন বলত, কী জানি কিসে বুঝি পিছু ধরেছে। পিঠ উঠত শিউরে। তখন ভূত প্রেত ছিল গল্পে-গুজবে, ছিল মানুষের মনের আনাচে-কানাচে। কোন্ দাসী কখন হঠাৎ শুনতে পেত শাঁকচুন্নির নাকী সুর, দড়াম্ করে পড়ত আছাড় খেয়ে। ঐ মেয়ে-ভূতটা সব চেয়ে ছিল বদ মেজাজি, তার লােভ ছিল মাছের ’পরে। বাড়ির পশ্চিম কোণে ঘনপাতাওয়ালা বাদাম গাছ, তারই ডালে এক পা আর অন্য পা’টা তেতালার কার্নিসের ’পরে তুলে দাঁড়িয়ে থাকে একটা কোন্ মূর্তি। তাকে দেখেছে বলবার লােক তখন বিস্তর ছিল, মেনে নেবার লােকও কম ছিল না। দাদার এক বন্ধু যখন গল্পটা হেসে উড়িয়ে দিতেন তখন চাকররা মনে করত, লােকটার ধম্মজ্ঞান একটুও নেই; দেবে একদিন ঘাড় মটকিয়ে, তখন বিদ্যে যাবে বেরিয়ে। সে সময়টাতে হাওয়ায় হাওয়ায় আতঙ্ক এমনি জাল ফেলেছিল যে, টেবিলের নীচে পা রাখলে পা সুড়্‌সুড়্ করে উঠত।

 তখন জলের কল বসে নি। বেহারা বাঁখে করে কলসি ভরে মাঘ-ফাগুনের গঙ্গার জল তুলে আনত। একতলার অন্ধকার ঘরে সারি সারি ভরা থাকত বড়াে বড়াে জালায় সারা বছরের খাবার জল। নীচের তলায় সেই সব স্যাঁৎসেতে এঁধাে কুটুরিতে গা ঢাকা দিয়ে যারা বাসা করে ছিল কে না জানে তাদের মস্ত হাঁ, চোখ দুটো বুকে, কান দুটো কুলাের মতাে, পা দুটো উল্টো দিকে। সেই ভুতুড়ে

১১