পাতা:ছেলেবেলা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ডুবল না, অমনিই বেঁচে গেল, এ তাে গপ্‌পই নয়। বার বার বলতে লাগলুম, ‘তার পর?’

 সে বললে, ‘তার পর সে এক কাণ্ড! দেখি, এক নেকড়ে বাঘ। ইয়া তার গোঁফ-জোড়া। ঝড়ের সময়ে সে উঠেছিল ও পারে গঞ্জের ঘাটের পাকুড় গাছে। দমকা হাওয়া যেমনি লাগল গাছ পড়ল ভেঙে পদ্মায়! বাঘভায়া ভেসে যায় জলের তােড়ে। খাবি খেতে খেতে উঠল এসে চরে। তাকে দেখেই আমার রশিতে লাগালুম ফাঁস। জানােয়ারটা এত্তো বড়াে চোখ পাকিয়ে দাঁড়ালাে আমার সামনে। সাঁতার কেটে তার জমে উঠেছে খিদে। আমাকে দেখে তার লাল টক্‌টকে জিভ দিয়ে নাল ঝরতে লাগল। বাইরে ভিতরে অনেক মানুষের সঙ্গে তার চেনাশােনা হয়ে গেছে, কিন্তু আবদুলকে সে চেনে না। আমি ডাক দিলুম, আও বাচ্ছা! সে সামনের দু পা তুলে উঠতেই দিলুম তার গলায় ফাঁস আটকিয়ে, ছাড়াবার জন্যে যতই ছট্‌ফট্ করে ততই ফাঁস এঁটে গিয়ে তার জিভ বেরিয়ে পড়ে।’

 এই পর্যন্ত শুনেই আমি ব্যস্ত হয়ে বললুম, ‘আবদুল, সে মরে গেল নাকি?’

 আবদুল বললে, ‘মরবে তার বাপের সাধ্যি কী? নদীতে বান এসেছে, বাহাদুরগঞ্জে ফিরতে হবে তাে? ডিঙির সঙ্গে জুড়ে বাঘের বাচ্ছাকে দিয়ে গুণ টানিয়ে নিলেম অন্তত বিশ ক্রোশ রাস্তা। গোঁ গোঁ করতে থাকে, পেটে দিই দাঁড়ের খোঁচা, দশ-পনেরাে ঘণ্টার রাস্তা দেড় ঘণ্টায় পৌছিয়ে দিলে। তার পরেকার কথা আর জিগ্‌গেস কোরাে না বাবা, জবাব মিলবে না।’

 আমি বললুম, ‘আচ্ছা, বেশ, বাঘ তাে হল, এবার কুমির?’

১৫