পাতা:ছেলেবেলা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 বসন্তকালের সেই মালীদের ফুলের ঝুড়ির খবর আজ নেই, কেন জানি নে। তখন বাড়িতে মেয়েদের খোঁপা থেকে বেলফুলের গোড়ে-মালার গন্ধ ছড়িয়ে যেত বাতাসে। গা ধুতে যাবার আগে ঘরের সামনে ব’সে, সমুখে হাত-আয়না রেখে মেয়েরা চুল বাঁধত। বিনুনিকরা চুলের দড়ি দিয়ে খোঁপা তৈরি হ’ত নানা কারিগরিতে। তাদের পরনে ছিল ফরাসডাঙার কালাপেড়ে শাড়ি, পাক দিয়ে কুঁচ্‌কিয়ে তোলা। নাপতিনি আসত, ঝামা দিয়ে পা ঘসে আলতা পরাত। মেয়েমহলে তারাই লাগত খবর-চালাচালির কাজে। ট্রামের পায়দানের উপর ভিড় করে কলেজ আর আপিস-ফেরার দল ফুটবল খেলার ময়দানে ছুটত না। ফেরবার সময় তাদের ভিড় জমত না সিনেমা-হলের সামনে। নাটক-অভিনয়ের একটা ফুর্তি দেখা দিয়েছিল, কিন্তু, কী আর বলব, আমরা সে সময়ে ছিলুম ছেলেমানুষ।

 তখন বড়োদের আমোদে ছেলেরা দূর থেকেও ভাগ বসাতে পেত না। যদি সাহস করে কাছাকাছি যেতুম তা হলে শুনতে হ’ত, ‘যাও, খেলা করো গে।’ অথচ ছেলেরা খেলায় যদি উচিতমতো গোল করত তা হলে শুনতে হ’ত, ‘চুপ করো।’ বড়োদের আমোদ-আহ্লাদ সব সময় খুব যে চুপচাপে সারা হ’ত তা নয়। তাই দূর থেকে কখনো কখনো ঝর্‌নার ফেনার মতো তার কিছু কিছু পড়ত ছিটকিয়ে আমাদের দিকে। এ বাড়ির বারান্দায় ঝুঁকে পড়ে তাকিয়ে থাকতুম; দেখতুম ও বাড়ির নাচঘর আলোয় আলোময়। দেউড়ির সামনে বড়ো বড়ো জুড়িগাড়ি এসে জুটেছে। সদর দরজার কাছ থেকে দাদাদের কেউ কেউ অতিথিদের উপরে আগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। গোলাপ-পাশ থেকে গায়ে গোলাপ জল ছিটিয়ে দিচ্ছেন,

২৪