পাতা:ছেলেবেলা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ভর্তি করেছি তাই দিয়েই। মন দিয়ে শেখা যদি আমার ধাতে থাকত তা হলে এখনকার দিনের ওস্তাদরা আমাকে তাচ্ছিল্য করতে পারত না। কেন-না সুযােগ ছিল বিস্তর। যে কয়দিন আমাদের শিক্ষা দেবার কর্তা ছিলেন সেজদাদা, ততদিন বিষ্ণুর কাছে আন্‌মনাভাবে ব্রহ্মসংগীত আউড়েছি। কখনাে কখনাে যখন মন আপনা হতে লেগেছে তখন গান আদায় করেছি দরজার পাশে দাঁড়িয়ে। সেজদাদা বেহাগে আওড়াচ্ছেন ‘অতি-গজগামিনীরে’, আমি লুকিয়ে মনের মধ্যে তার ছাপ তুলে নিচ্ছি। সন্ধেবেলায় মাকে সেই গান শুনিয়ে অবাক করা খুব সহজ কাজ ছিল।

 আমাদের বাড়ির বন্ধু শ্রীকণ্ঠবাবু দিনরাত গানের মধ্যে তলিয়ে থাকতেন। বারান্দায় বসে বসে চামেলির তেল মেখে স্নান করতেন; হাতে থাকত গুড়্‌গুড়ি, অম্বুরি তামাকের গন্ধ উঠত আকাশে; গুন্ গুন্ গান চলত, ছেলেদের টেনে রাখতেন চার দিকে। তিনি তাে গান শেখাতেন না; গান তিনি দিতেন, কখন তুলে নিতুম জানতে পারতুম না। ফুর্তি যখন রাখতে পারতেন না, দাঁড়িয়ে উঠতেন, নেচে নেচে বাজাতে থাকতেন সেতার, হাসিতে বড়াে বড়াে চোখ জ্বল্ জ্বল্ করত, গান ধরতেন—

‘ময় ছােড়োঁ ব্রজকী বাসরী।’

সঙ্গে সঙ্গে আমিও না গাইলে ছাড়তেন না।

 তখনকার আতিথ্য ছিল খােলা দরজার। চেনাশােনার, খোঁজখবর নেবার বিশেষ দরকার ছিল না। যারা যখন এসে পড়ত তাদের শোবার জায়গাও মিলত, অন্নের থালাও আসত যথানিয়মে। সেই রকমের অচেনা অতিথি একদিন লেপ-মােড়া তম্বুরা কাঁখে ক’রে

৩৪