চলছে দূরের থেকে দূরে। গলির ধারের বাড়ির ছাতে বড়ােবউ ভিজে চুল শুকোচ্ছে রােদ্দুরে; তার দুই মেয়ে কড়ি নিয়ে খেলেই চলেছে, কোনাে তাড়া নেই। মেয়েদের তখন ইস্কুল যাওয়ার তাগিদ ছিল না। মনে হ’ত মেয়ে-জন্মটা নিছক সুখের। বুড়াে ঘােড়া পাল্কিগাড়িতে করে টেনে নিয়ে চলল আমার দশটা-চারটার আন্দামানে। সাড়ে চারটের পর ফিরে আসি ইস্কুল থেকে। জিম্নাস্টিকের মাস্টার এসেছেন। কাঠের ডাণ্ডার উপর ঘণ্টাখানেক ধরে শরীরটাকে উলট-পালট করি। তিনি যেতে না যেতে এসে পড়েন ছবি-আঁকার মাস্টার।
ক্রমে দিনের মরচে-পড়া আলো মিলিয়ে আসে। শহরের পাঁচমিশালি ঝাপসা শব্দে স্বপ্নের সুর লাগায় ইটকাঠের দৈত্যটার দেহে।
পড়বার ঘরে জ্বলে ওঠে তেলের বাতি। অঘোের মাস্টার এসে উপস্থিত। শুরু হয়েছে ইংরেজি পড়া। কালাে কালাে মলাটের রীডার যেন ওৎ পেতে রয়েছে টেবিলের উপর। মলাটটা ঢল্ঢলে; পাতাগুলাে কিছু ছিঁড়েছে, কিছু দাগি; অজায়গায় হাত পাকিয়েছি নিজের নাম ইংরেজিতে লিখে, তার সবটাই ক্যাপিটল অক্ষর। পড়তে পড়তে ঢুলি, ঢুলতে ঢুলতে চমকে উঠি। যত পড়ি তার চেয়ে না পড়ি অনেক বেশি।
বিছানায় ঢুকে এতক্ষণ পরে পাওয়া যায় একটুখানি পােড়ো সময়। সেখানে শুনতে শুনতে শেষ হতে পায় না—
‘রাজপুত্তুর চলেছে তেপান্তরের মাঠে’...