পাতা:ছেলেবেলা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ঋজুপাঠ দ্বিতীয় ভাগ থেকে স্বয়ং বাল্মীকি-রামায়ণের টুকরো আউড়ে দিয়েছি অনুস্বার-বিসর্গ-সুদ্ধ। মা জানতেন না তাঁর ছেলের উচ্চারণ কত খাঁটি, তবু তার বিদ্যের পাল্লা সূর্যের ন কোটি মাইল রাস্তা পেরিয়ে গিয়ে তাঁকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এ-সব শ্লোক স্বয়ং নারদ মুনি ছাড়া আর কারো মুখে শোনা যেতে পারে, এ কথা কে জানত বলো।

 বাড়ি-ভিতরের এই ছাদটা ছিল আগাগোড়া মেয়েদের দখলে। ভাঁড়ারের সঙ্গে ছিল তার বোঝাপড়া। ওখানে রোদ পড়ত পুরোপুরি, জারক নেবুকে দিত জারিয়ে। ঐখানে মেয়েরা বসত পিতলের গামলা-ভরা কলাইবাটা নিয়ে। টিপে টিপে টপ্ টপ্ করে বড়ি দিত চুল শুকোতে শুকোতে। দাসীরা বাসি কাপড় কেচে মেলে দিয়ে যেত রোদ্‌দুরে। তখন অনেকটা হাল্কা ছিল ধোবার কাজ। কাঁচা আম ফালি করে কেটে কেটে আমসি শুকোনো হ’ত, ছোটো বড়ো নানা সাইজের নানা কাজ করা কালো পাথরের ছাঁচে আমের রস থাকে থাকে জমিয়ে তোলা হ’ত, রোদ-খাওয়া সর্ষের তেলে মজে উঠত ইঁচড়ের আচার। কেয়াখয়ের তৈরি হ’ত সাবধানে, তার কথাটা আমার বেশি করে মনে রাখবার মানে আছে। যখন ইস্কুলের পণ্ডিতমশায় আমাকে জানিয়ে দিলেন আমাদের বাড়ির কেয়াখয়েরের নাম তাঁর শোনা আছে, অর্থ বুঝতে শক্ত ঠেকল না। যা তাঁর শোনা আছে সেটা তাঁর জানা চাই। তাই বাড়ির সুনাম বজায় রাখবার জন্য মাঝে মাঝে লুকিয়ে ছাদে উঠে দুটো-একটা কেয়াখয়ের— কী বলব— ‘চুরি করতুম’ বলার চেয়ে বলা ভালো অপহরণ করতুম। কেননা, রাজা-মহারাজারাও দরকার হলে, এমন-কি না হলেও, অপহরণ

৪২