পাতা:ছেলেবেলা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করে থাকেন; আর যারা চুরি করে তাদের জেলে পাঠান, শূলে চড়ান। শীতের কাঁচা রৌদ্রে ছাদে বসে গল্প করতে করতে কাক তাড়াবার আর সময় কাটাবার একটা দায় ছিল মেয়েদের। বাড়িতে আমি ছিলুম একমাত্র দেওর—বউদিদির আমসত্ত্ব পাহারা, তা ছাড়া আরো পাঁচ রকম খুচরো কাজের সাথি। পড়ে শোনাতুম ‘বঙ্গাধিপপরাজয়’। কখনো কখনো আমার উপরে ভার পড়ত জাঁতি দিয়ে সুপুরি কাটবার। খুব সরু করে সুপুরি কাটতে পারতুম। আমার অন্য কোনো গুণ যে ছিল সে কথা কিছুতেই বউঠাকরুন মানতেন না, এমন-কি চেহারারও খুঁত ধরে বিধাতার উপর রাগ ধরিয়ে দিতেন। কিন্তু, আমার সুপুরি-কাটা হাতের গুণ বাড়িয়ে বলতে মুখে বাধত না। তাতে সুপুরি কাটার কাজটা চলত খুব দৌড়-বেগে। উস্‌কিয়ে দেবার লোক না থাকাতে সরু করে সুপুরি কাটার হাত অনেকদিন থেকে অন্য সরু কাজে লাগিয়েছি।

 ছাদে-মেলে-দেওয়া এই-সব মেয়েলি কাজে পাড়াগাঁয়ের একটা স্বাদ ছিল। এই কাজগুলো সেই সময়কার যখন বাড়িতে ছিল ঢেঁকিশাল, যখন হ’ত নাড়ু কোটা, যখন দাসীরা সন্ধেবেলায় বসে উরুতের উপর সলতে পাকাত, আর প্রতিবেশীর ঘরে ডাক পড়ত আটকৌড়ির নেমন্তন্নে। রূপকথা আজকাল ছেলেরা মেয়েদের মুখ থেকে শুনতে পায় না, নিজে নিজে পড়ে ছাপানো বই থেকে। আচার চাটনি এখন কিনে আনতে হয় নতুন-বাজার থেকে— বোতলে ভরা, গালা দিয়ে ছিপিতে বন্ধ।

 পাড়াগাঁয়ের আরো-একটি ছাপ ছিল চণ্ডীমণ্ডপে। ওইখানে গুরুমশায়ের পাঠশালা বসত। কেবল বাড়ির নয়, পাড়া-প্রতিবেশীর

৪৩