সবুজে। নানা বাড়ির নানা গড়নের উঁচুনিচু ছাদ চোখে ঠেকে, মধ্যে মধ্যে দেখা যায় গাছের ঝাঁকড়া মাথা। আমি লুকিয়ে ছাদে উঠতুম প্রায়ই দুপুর বেলায়। বরাবর এই দুপুর বেলাটা নিয়েছে আমার মন ভুলিয়ে। ও যেন দিনের বেলাকার রাত্তির, বালক সন্ন্যাসীর বিবাগি হয়ে যাবার সময়। খড়্খড়ির ভিতর দিয়ে হাত গলিয়ে ঘরের ছিটকিনি দিতুম খুলে। দরজার ঠিক সামনেই ছিল একটা সােফা; সেইখানে অত্যন্ত একলা হয়ে বসতুম। আমাকে পাকড়া করবার চৌকিদার যারা, পেট ভ’রে খেয়ে তাদের ঝিমুনি এসেছে; গা মােড়া দিতে দিতে শুয়ে পড়েছে মাদুর জুড়ে।
রাঙা হয়ে আসত রোদ্দুর, চিল ডেকে যেত আকাশে। সামনের গলি দিয়ে হেঁকে যেত চুড়িওয়ালা।— সেদিনকার দুপুর বেলাকার সেই চুপচাপ বেলা আজ আর নেই, আর নেই সেই চুপচাপ বেলার ফেরিওয়ালা।—
হঠাৎ তাদের হাঁক পৌঁছত, যেখানে বালিশের উপর খােলা চুল এলিয়ে দিয়ে শুয়ে থাকত বাড়ির বউ। দাসী ডেকে নিয়ে আসত ভিতরে, বুড়াে চুড়িওয়ালা কচি হাত টিপে টিপে পরিয়ে দিত পছন্দমতাে বেলােয়ারি চুড়ি। সেদিনকার সেই বউ আজকের দিনে এখনাে বউয়ের পদ পায় নি; সেকেণ্ড ক্লাসে সে পড়া মুখস্থ করছে। আর সেই চুড়িওয়ালা হয়তাে আজ সেই গলিতেই বেড়াচ্ছে রিক্শ ঠেলে। ছাদটা ছিল আমার কেতাবে-পড়া মরুভূমি, ধূ ধূ করছে চার দিক। গরম বাতাস হু হু করে ছুটে যাচ্ছে ধুলাে উড়িয়ে, আকাশের নীল রঙ এসেছে ফিকে হয়ে।
এই ছাদের মরুভূমিতে তখন একটা ওয়েসিস দেখা দিয়েছিল।