পাতা:ছেলেবেলা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

জ্যাঠামি ব’লে কখনাে আমার মুখ চাপা দেন নি। তাই কোনাে কথা ভাবতে আমার সাহসে অকুলােন হয় নি। আজ ছেলেদের মধ্যেই আমার বাস। পাঁচ-রকম কথা পাড়ি, দেখি তাদের মুখ বােজা। জিজ্ঞেসা করতে এদের বাধে। বুঝতে পারি এরা সব সেই বুড়ােদের কালের ছেলে যে কালে বড়ােরা কইত কথা আর ছােটোরা থাকত বােবা। জিজ্ঞাসা করবার সাহস নতুন কালের ছেলেদের; আর বুড়ােকালের ছেলেরা সব-কিছু মেনে নেয় ঘাড় গুঁজে।

 ছাদের ঘরে এল পিয়ানাে। আর এল একালের বার্নিশ করা বউবাজারের আসবাব। বুকের ছাতি উঠল ফুলে। গরিবের চোখে দেখা দিল হাল আমলের সস্তা আমিরি।

 এইবার ছুটল আমার গানের ফোয়ারা। জ্যোতিদাদা পিয়ানাের উপর হাত চালিয়ে নতুন নতুন ভঙ্গিতে ঝমাঝম্ সুর তৈরি করে যেতেন; আমাকে রাখতেন পাশে। তখনই-তখনই সেই ছুটে-চলা সুরে কথা বসিয়ে বেঁধে রাখবার কাজ ছিল আমার।

 দিনের শেষে ছাদের উপর পড়ত মাদুর আর তাকিয়া। একটা রুপাের রেকাবিতে বেলফুলের গােড়েমালা ভিজে রুমালে, পিরিচে এক-গ্লাস বরফ-দেওয়া জল, আর বাটাতে ছাঁচিপান।

 বউঠাকরুন গা ধুয়ে, চুল বেঁধে, তৈরি হয়ে বসতেন। গায়ে একখানা পাতলা চাদর উড়িয়ে আসতেন জ্যোতিদাদা; বেহালাতে লাগাতেন ছড়ি, আমি ধরতুম চড়া সুরের গান। গলায় যেটুকু সুর দিয়েছিলেন বিধাতা তখনাে তা ফিরিয়ে নেন নি। সূর্য-ডােবা আকাশে ছাদে ছাদে ছড়িয়ে যেত আমার গান। হু হু ক’রে দক্ষিণে বাতাস উঠত দূর সমুদ্র থেকে, তারায় তারায় যেত আকাশ ভ’রে।

৫১