পাতা:ছেলেবেলা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কিন্তু এ চোরাই মালগুলাে দামি জিনিস।

 মনে পড়ে পয়ারে ত্রিপদীতে মিলিয়ে একবার একটা কবিতা বানিয়েছিলুম; তাতে এই দুঃখ জানিয়েছিলুম যে, সাঁতার দিয়ে পদ্ম তুলতে গিয়ে নিজের হাতের ঢেউয়ে পদ্মটা সরে সরে যায়, তাকে ধরা যায় না। অক্ষয়বাবু তাঁর আত্মীয়দের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে এই কবিতা শুনিয়ে বেড়ালেন। আত্মীয়রা বললেন— ছেলেটির লেখবার হাত আছে।

 বউঠাকরুনের ব্যবহার ছিল উল্টো। কোনাে কালে আমি যে লিখিয়ে হব, এ তিনি কিছুতেই মানতেন না। কেবলই খোঁটা দিয়ে বলতেন কোনাে কালে বিহারী চক্রবর্তীর মতাে লিখতে পারব না। আমি মনমরা হয়ে ভাবতুম তাঁর চেয়ে অনেক নীচের ধাপের মার্কা যদি মিলত, তা হলে মেয়েদের সাজ নিয়ে তাঁর খুদে দেওর কবির অপছন্দ অমন করে উড়িয়ে দিতে তাঁর বাধত।


 জ্যোতিদাদা ঘােড়ায় চড়তে ভালােবাসতেন। বউঠাকরুনকেও ঘােড়ায় চড়িয়ে চিৎপুরের রাস্তা দিয়ে ইডেন গার্ডেনে বেড়াতে যেতেন, এমন ঘটনাও সেদিন ঘটেছিল। শিলাইদহে আমাকে দিলেন এক টাট্টুঘােড়া। সে জন্তুটা কম দৌড়বাজ ছিল না। আমাকে পাঠিয়ে দিলেন রথতলার মাঠে ঘােড়া দৌড় করিয়ে আনতে। সেই এবড়ােখেবড়াে মাঠে পড়ি-পড়ি করতে করতে ঘােড়া ছুটিয়ে আনতুম। আমি পড়ব না, তাঁর মনে এই জোর ছিল ব’লেই আমি পড়ি নি। কিছুকাল পরে কলকাতার রাস্তাতেও আমাকে ঘােড়ায় চড়িয়েছিলেন। সে টাট্টু নয়, বেশ মেজাজি ঘােড়া। একদিন সে আমাকে পিঠে নিয়ে

৫৭