সহজ চলনের বেগ! মাঠে ফসল ছিল না। ছুটন্ত বাঘকে ভরপুর ক’রে দেখবার জায়গা এই বটে, সেই রৌদ্রঢালা হলদে রঙের প্রকাণ্ড মাঠ।
আর-একটা কথা বাকি আছে, শুনতে মজা লাগতে পারে। শিলাইদহে মালী ফুল তুলে এনে ফুলদানিতে সাজিয়ে দিত। আমার মাথায় খেয়াল গেল ফুলের রঙিন রস দিয়ে কবিতা লিখতে। টিপে টিপে যে রসটুকু পাওয়া যায় সে কলমের মুখে উঠতে চায় না। ভাবতে লাগলুম একটা কল তৈরি করা চাই। ছেঁদাওয়ালা একটা কাঠের বাটি আর তার উপরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চালাবার মতো একটা হামান্দিস্তের নোড়া হলেই চলবে। সেটা ঘোরানো যাবে দড়িতে বাঁধা একটা চাকায়। জ্যোতিদাদাকে দরবার জানালুম। হয়তো মনে মনে তিনি হাসলেন, বাইরে সেটা ধরা পড়ল না। হুকুম করলেন, ছুতোর এল কাঠ-কোঠ নিয়ে। কল তৈরি হল। ফুলে-ভরা কাঠের বাটিতে দড়িতে বাঁধা নোড়া যতই ঘোরাতে থাকি ফুলপিষে কাদা হয়ে যায়, রস বেরোয় না। জ্যোতিদাদা দেখলেন, ফুলের রস আর কলের চাপে ছন্দ মিলল না। তবু আমার মুখের উপর হেসে উঠলেন না।
জীবনে এই একবার এঞ্জিনিয়ারি করতে নেবেছিলুম। যে যা নয় নিজেকে তাই যখন কেউ ভাবে, তার মাথা হেঁট করে দেবার এক দেবতা তৈরি থাকেন শাস্ত্রে এমন কথা আছে। সেই দেবতা সেদিন আমার এঞ্জিনিয়ারির দিকে কটাক্ষ করেছিলেন; তার পর থেকে যন্ত্রে হাত লাগানো আমার বন্ধ, এমনকি সেতারে এস্রাজেও তার চড়াই নি।