পাতা:ছেলেবেলা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 জীবনস্মৃতিতে লিখেছি, ফ্লটিলা কোম্পানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশের নদীতে স্বদেশী জাহাজ চালাতে গিয়ে কী করে জ্যোতিদাদা নিজেকে ফতুর করে দিলেন। বউঠাকরুনের মৃত্যু হয়েছে তার আগেই। জ্যোতিদাদা তাঁর তেতালার বাসা ভেঙে চলে গেলেন। শেষকালে বাড়ি বানালেন রাঁচির এক পাহাড়ের উপর।


১২

এইবার তেতলাঘরের আর-এক পালা আরম্ভ হল আমার সংসার নিয়ে।

 একদিন গােলাবাড়ি পাল্কি আর তেতলার ছাদের খালি ঘরে আমার ছিল যেন বেদের বাসা, কখনাে এখানে, কখনাে ওখানে। বউঠাকরুন এলেন, ছাদের ঘরে বাগান দিল দেখা। উপরের ঘরে এল পিয়ানাে, নতুন নতুন সুরের ফোয়ারা ছুটল।

 পূর্বদিকের চিলেকোঠার ছায়ায় জ্যোতিদাদার কফি খাওয়ার সরঞ্জাম হ’ত সকালে। সেই সময়ে পড়ে শােনাতেন তাঁর কোনােএকটা নতুন নাটকের প্রথম খসড়া। তার মধ্যে কখনাে কখনাে কিছু জুড়ে দেবার জন্যে আমাকেও ডাক পড়ত আমার অত্যন্ত কাঁচা হাতের লাইনের জন্যে। ক্রমে রােদ এগিয়ে আসত— কাকগুলাে ডাকাডাকি করত উপরের ছাদে বসে রুটির টুকরাের ’পরে লক্ষ করে। দশটা বাজলে ছায়া যেত ক্ষ’য়ে, ছাতটা উঠত তেতে।

 দুপুরবেলায় জ্যোতিদাদা যেতেন নীচের তলায় কাছারিতে। বউঠাকরুন ফলের খােসা ছাড়িয়ে কেটে কেটে যত্ন ক’রে রুপাের

৬১