পাতা:ছেলেবেলা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বানানাে, সংস্কৃত ভাষার ধ্বনিকে বাংলা ভাষার ধ্বনির বাটখারায় ওজন করে করে সাজিয়ে তুলতেন; তার অনেকগুলাে রেখেছেন, অনেকগুলি রাখেন নি— ছেঁড়া পাতায় ছড়াছড়ি গেছে। তার পরে কাব্য লিখতে লাগলেন; যত লিখে রাখতেন তার চেয়ে ফেলে দিতেন অনেক বেশি। যা লিখতেন তা সহজে পছন্দ হ’ত না। তাঁর সেই-সব ফেলা-ছড়া লাইনগুলাে কুড়িয়ে রাখবার মতাে বুদ্ধি আমাদের ছিল না। যেমন যেমন লিখতেন, শুনিয়ে যেতেন; শােনবার লােক জমত তাঁর চার দিকে। আমরা বাড়িসুদ্ধ সবাই মেতে গিয়েছিলুম এই কাব্যের রসে। পড়ার মাঝে মাঝে উচ্চহাসি উঠত উথলিয়ে। তাঁর হাসি ছিল আকাশ-ভরা, সেই হাসির ঝোঁকের মাথায় কেউ যদি হাতের কাছে থাকত তাকে চাপড়িয়ে অস্থির করে তুলতেন। জোড়াসাঁকোর বাড়ির প্রাণের একটি ঝরনাতলা ছিল এই দক্ষিণের বারান্দা; শুকিয়ে গেল এর স্রোত; বড়দাদা চলে গেলেন শান্তিনিকেতন-আশ্রমে। আমার কেবল মাঝে মাঝে মনে পড়ে— ঐ বারান্দার সামনেকার বাগানে মন-কেমন-করা শরতের রােদ্‌দুর ছড়িয়ে পড়েছে, আমি নতুন গান তৈরি করে গাচ্ছি—

আজি  শরততপনে প্রভাতস্বপনে
কী জানি পরান কী যে চায়।

আর মনে আসে একটি তপ্তদিনের ঝাঁ ঝাঁ দুই প্রহরের গান—

হেলাফেলা সারাবেলা,
এ কী খেলা আপন-সনে।

 বড়দাদার আর-একটি অভ্যাস ছিল চোখে পড়বার মতাে, সে তাঁর সাঁতার কাটা। পুকুরে নেমে কিছু না হবে তাে পঞ্চাশ বার এ

৬৬