পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী
১০৩

 বৈশাখ মাস শেষ হইলে শ্যামা একদিন বলিল, দোকানের হিসাবপত্র করলে মামা, লাভটাভ হ’ল?

 মামা বলিল, লাভ কিরে শ্যামা, বসতে না বসতে কি লাভ হয়? খরচ উঠুক আগে।

 শ্যামা বলিল, নতুন দোকান দিয়ে বসার খরচ দু’এক মাসে উঠবে না তা জানি মামা, তা বলিনি, বিক্রীর ওপোর লাভটাভ কি রকম হল হিসাব করনি?—কত বেচলে, কেনা দাম ধরে কত লাভ রইল, করনি সে হিসাব?

 মামা বলিল, তুই আমাকে দোকান করা শেখাতে আসিসনে শ্যামা।

 এবার গ্রীষ্মের ছুটি হওয়ার আগে ক্লাশের ছেলেদের অনেকেই নানা স্থানে বেড়াইতে যাইবে শুনিয়া বিধানের ইচ্ছা হইয়াছিল সেও কোথাও যায়—কোথায় যাইবে? কোথায় তাহার কে আছে, কার কাছে সে গিয়া কিছুদিন থাকিয়া আসিতে পারে? বনগাঁ গেলে হইত,—মন্দাকে শ্যামা চিঠি লিখিয়াছিল, মন্দা জবাব দিয়াছে এখন সেখানে চারিদিকে বড় কলেরা বসন্ত হইতেছে—এখন না গিয়া বিধান যেন পূজার সময় যায়।

 বিষ্ণুপ্রিয়ারা এবার দার্জিলিং গিয়াছে। তখনও স্কুলের ছুটি হয় নাই,—শঙ্কর সঙ্গে যাইতে পারে নাই। বিষ্ণুপ্রিয়া এখানে থাকিবার সময় শঙ্কর বোধ হয় সাহস পাইত না, বিষ্ণুপ্রিয়া দার্জিলিং চলিয়া গেলে একদিন বিকালে সে এ বাড়িতে আসিল।

 শ্যামা বারান্দায় তরকারি কুটিতেছিল। বিধান কাছেই দেয়ালে ঠেস্ দিয়া বসিয়া ছেলেদের একটা ইংরাজি গল্পের বই পড়িতেছিল, মুখ তুলিয়া শঙ্করকে দেখিয়া সে আবার পড়ায় মন দিল।

 শঙ্করকে বসিতে দিয়া শ্যামা বলিল, কে এসেছে দেখ খোকা।

 বিধান শুধু বলিল, দেখেছি।

 বিধান কি আজো সে অপমান ভোলে নাই, বন্ধু বাড়ি আসিয়াছে, তার সঙ্গে সে কথা বলিবে না? লাজুক শঙ্করের মুখখানা লাল হইয়া উঠিয়াছিল, শ্যামা টান দিয়া বিধানের বই কাড়িয়া লইল, বলিল, নে, ঢের বিদ্যে হয়েছে, যা দিকি দুজনে দোতালায়, বাতাস লাগবে একটু,—যা গরম এখানে।

 বিধান আস্তে আস্তে ঘরের মধ্যে গিয়া বসিল। শ্যামা বলিল, তোমাদের