পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী
১১৩

বিবাগী এতগুলি প্রাণীর জীবিকা অর্জনের পথ খুঁজিয়া পাইবে কোথায়? শ্যামা বড় মমতা বোধ করে। বলে, অত ভেবো না মামা, ভগবান যাহোক একটা উপায় করবেন।

 ভগবান? মামার বোধ হয় ভগবানের কথা মনে ছিল না। ভগবান যে মানুষের যাহোক একটা উপায় করেন এও বোধ হয় এতদিন তাহার খেয়াল থাকে নাই। শ্যামা মনে পড়াইয়া দিলে মামা বোধ হয় নিশ্চিন্ত মনেই শ্যামা ও তাহার চারিটি সন্তানকে ভগবানের হাতে সমর্পণ করিয়া ভাদ্রের তিন তারিখে নিরুদ্দেশ হইয়া গেল। যাওয়ার আগে শুধু বলিয়া গেল, কিছু মনে করিস নে শ্যামা, তোর সেই হাজার টাকাটা খরচ করে ফেলেছি,—শ’ দেড়েক মোটে আছে, নে। বড়ো মামাকে শাপ দিস্‌নে মা, একটি টাকা মোটে আমি সঙ্গে নিলাম।

 শাপ শ্যামা দেয় নাই। পাগলের মত কি যেন সব বলিয়াছিল। কথা গুলি মিষ্টি নয়। কোন ভাগ্নীই সাধারণত মামাকে ওসব কথা বলে না। ক্যাম্বিশের ব্যাগটি হাতে করিয়া কম্বলের গুটানো বিছানাটা বগলে করিয়া মামা যখন চলিয়া গেল শ্যামা তখনও পাগলের মত কি সব যেন বলিতেছে।



সাত

 পরের বছর শরৎ কালে—শ্যামা প্রথম সন্তানের জননী হওয়ার সময় পৃথিবীতে শরৎ কালটা যেমন ছিল, এখনো তেমনি থাকার মত আশ্চর্য শরৎকালে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে লইয়া শ্যামা বনগাঁ গেল। বলিল, ঠাকুরঝি, আমার আর তো কোথাও আশ্রয় নেই। খেতে না পেয়ে আমার ছেলেমেয়ে মরে যাবে। ওদের তুমি দুটি দুটি খেতে দাও। আমি তোমার বাড়ি দাসী হয়ে থাকব।

 মন্দা মুখ ভার করিয়া বলিল, এসেছ থাকো, ওসব বোলো না বৌ। তোষামুদে কথা আমি ভালবাসি নে।