পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী
১২৩

ফের ভাড়াটে আসবে,—ওপরে একখানা, নিচে তিনখানা ঘর, কুড়ি টাকায় ও-বাড়ি লুপে নেবে না? পাড়ার কাউকে চিঠি দাও না?

 হারান ডাক্তারকে শ্যামা একখানা পত্র লিখিয়া দিল। হারান জবাব দিল, ভয় নাই, বাড়ি শ্যামার খালি থাকিবে না, দু’এক মাসের মধ্যে আবার অবশ্যই ভাড়াটে জুটিবে।

 ইংরাজি মাসের পাঁচ ছয় তারিখে শ্যামা ভাড়ার টাকার মণিঅর্ডার পাইত, এবার দশ তারিখ হইয়া গেল টাকা আসিল না। কনকলতারা কোথায় উঠিয়া গিয়াছে শ্যামা জানিত না, নিজের বাড়ির ঠিকানাতেই সে তাগিদ দিয়। চিঠি লিখিল, ভাবিল, পোস্টাপিসে ওরা কি আর ঠিকানা রাখিয়া যায় নাই? এ পত্রের কোন জবাব শ্যামা পাইল না।

 মন্দা বলিল, দিচ্ছে ভাড়া! এতকাল যে দিয়েছিল তাই ভাগ্যি বলে জেনো বৌ। কলকাতার লোকে বাড়ি ভাড়া দেয় নাকি? একমাস দু’মাস দেয়, তারপর কদিন পারে থেকে অন্য বাড়িতে উঠে যায়,—কর ভাড়া আদায় মোকদ্দমা করে!

 শ্যামা বিবর্ণ মুখে বলিল, আমার যে একটি পয়সা নেই ঠাকুরঝি? আমি যে ওই ক’টা টাকার ভরসা ক’রছিলাম?

 মন্দা বলিল, জলে তো পড়নি?

 তারপর বলিল, বাড়িটা বেচে দিলেই তো পার বৌ? এত কষ্ট সয়ে ও বাড়ি রেখে করবে কি? থাকতেও তো পারছ না নিজে? টাকাটা হাতে এলে বরং লাগবে কাজে,—তারপর কপালে থাকে বাড়ি আবার হবে, না থাকে হবে না! দাদা বেরিয়ে এসে কিছু একটা করবে নিশ্চয়। নাও যদি করে বৌ, ছেলে তো উপযুক্ত হয়ে উঠবে তোমার বাড়ির টাকা শেষ হতে হতে,—তখন আর তোমার দুঃখ কিসের?

 মুখখানা মন্দা ম্লান করিয়া আনিল, দুঃখের সঙ্গে বলিল, ও বাড়ি বেচতে বলতে আমার ভাল লাগছে ভেবো না বৌ,—আমার বাপের ভিটে তো। কিন্তু কি করবে বল? নিরুপায় হলে মানুষকে সব করতে হয়।

 বাড়িটা বিক্রয় করিয়া ফেলার কথা শ্যামা ভাবিতেও পারে না। একটা বাড়ি না থাকিলে মানুষের থাকিল কি? দেশে একটা ভিটা থাকিলেও