পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী
১৩৯

 পরীক্ষার ফল বাহির হইলে জানা গিয়াছে বিধান ক্লাশে উঠিয়াছে প্রথম হইয়া।



আট

বনগাঁএ শ্যামার একে একে আরও চার বছর কাটিয়া গেল।

 কলিকাতার বাড়িটা তাহাকে বিক্রয় করিয়া দিতে হইয়াছে। ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করিয়া বিধান যখন কলিকাতায় পড়িতে গেল তখন—শীতলের প্রত্যাবর্তনের এক বছর পরে।

 শীতলের অসুখের জন্য অনেক টাকা খরচ করিতে না হইলে রাখাল হয়ত শেষ পর্যন্ত বিধানের পড়ার খরচ দিতে রাজি হইত। বড় খারাপ অসুখ হইয়াছিল শীতলের। বেশি জ্বর, অনাহার, দারুণ শীতে উপযুক্ত আবরণের অভাব, মানসিক পীড়া এই সব মিলিয়া শীতলের স্নায়ুরোগ জন্মাইয়া দিয়াছিল। দেহের সমস্ত স্নায়ু তাহার উঠিয়াছিল ফুলিয়া। চিকিৎসার জন্য তাহাকে কলিকাতা লইয়া যাইতে হইয়াছিল। তিনমাস সে পড়িয়া ছিল হাসপাতালে। তারপর শ্যামার কাঁদা-কাটায় রাখাল আরও তিনমাস তাহার বৈদ্যুতিক চিকিৎসা চালাইয়াছিল। তার ফলে যতদূর সুস্থ হওয়া সম্ভব শীতল তা হইয়াছে। কিন্তু জীবনে সে যে কাজকর্ম কিছু করিতে পারিবে সে ভরসা আর নাই। যতখানি তাহার অক্ষমতা নয়, ভান করে সে তার চেয়ে বেশি শুইয়া বসিয়া অলস অকর্মণ্য দায়িত্বহীন জীবন যাপনের সুখটা টের পাইয়া হয়ত সে মুগ্ধ হইয়াছে। হযত সে সত্যই বিশ্বাস করে, দারুণ সে অসুস্থ, কর্ম-জীবনের তাহার অবসান হইয়াছে। হয়ত সে হিষ্টিরিয়াগ্রস্ত, অসুখের অজুহাতে সকলের দয়া ও সহানুভূতি, মমতা ও সেবা লাভ করার চেয়ে বড় আর তার কাছে কিছুই নাই। তবে সবটা শীতলের ফাঁকি নয়, শরীরে তাহার গোলমাল আছে, মাথাটা ভোঁতা হইয়া যাওয়াও কাল্পনিক নয়, অসুখের যে বাড়াবাড়ি ভানটুকু সে করে তার ভিত্তিও তো মানসিক রোগ।