যখন ডান হাতের শাঁখাটি ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছিল বিশেষ কিছু কেহ তখন তাহাকে বলে নাই, কেবল ওই পিস্শাশুড়ী অনেকক্ষণ বকাবকি করিয়াছিল, বলিয়াছিল অলক্ষ্মী, বলিয়াছিল বজ্জাত।
বলুক, পিস্শাশুড়ী কে? শাশুড়ী ননদই আসল, তারা ভাল হইলেই হইল।
বকুল বলিয়াছিল, না মা, পিস্শাশুড়ীর প্রতাপ ওখানে সবার চেয়ে বেশি, সবাই তার কথায় ওঠে বসে। ঘরদোর তার কিনা সব, নগদ টাকা আর সম্পত্তিও নাকি অনেক আছে শুনলাম, তাইতে সবাই তাকে মেনে চলে। বুড়ীর ভয়ে কেউ জোরে কথাটি কয় না মা।
তাহা হইলে ভাবনার কথা বটে। শ্যামা অসন্তুষ্ট হইয়া বলিয়াছিল, কদিন ছিলি তার মধ্যে শাঁখা ভেঙ্গে বুড়ীর বিষনজরে পড়লি। বৌ-মানুষ তুই সেখানে, একটু সাবধানে চলাফেরা করতে হয়।
বকুল বলিয়াছিল, পা পিছলে গেল, আমি কি করব? আমি তো ইচ্ছে করে পড়িনি!
সুপ্রভা বালয়াছিল, মরুক পিস্শাশুড়ী, জামাই ভাল হলেই হল। সব তো আর মনের মত হয় না।
তা বটে। স্বামীই তো স্ত্রীলোকের সব। স্বামী যদি ভাল হয়, স্বামী যদি ভালবাসে, হাজার দজ্জ্বাল পিস্শাশুড়ী থাক, কি আসিয়া যায় মেয়েমানুষের?
মোহিনী ভালবাসে না বকুলকে?
মোটা মোটা চিঠি তো আসে সপ্তাহে দু'খানা! ভালবাসার কথা ছাড়া কি আর লেখে মোহিনী অত সব? আর কি লিখিবার আছে তাহার?
সুপ্রভার মেয়েকে বকুল বরের চিঠি পড়িতে দেয়। শ্যামা, সুপ্রভা, মন্দা সকলে আগ্রহের সঙ্গে একবার তাকে প্রশ্ন করিয়াছিল, সে হাসিয়া বলিয়াছিল, ভেবো না মামী ভেবো না, যা কবিত্ব করে চিঠিতে, জামাই তোমার ভেড়া বনে গেছে।
তবু, লুকাইয়া মেয়ের একখানা চিঠিতে শ্যামা চোখ বুলাইতে ছাড়ে নাই। টাঙ্গানো লেপের বস্তার কোথায় কোন ফাঁকে চিঠিখানা আপাতত গোপন