পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৬
জননী

 মোহিনী ভয় পাইয়া বলে, টেলিগ্রাম যদি করতে হয় পিসীকে করুন। কিন্তু তাতে কিছু লাভ হবে না, অনুমতি পিসী দেবে না, মাঝ থেকে শুধু চটবে।

 কেহ আর কিছু বলে না, মনে মনে সকলে অসন্তুষ্ট হইয়া থাকে। বুঝিতে পারিয়া মোহিনী বড় অস্বস্তি বোধ করে। সুপ্রভার মেয়েকে সে বুঝাইবার চেষ্টা করে যে এ ব্যাপারে তার কোন দোষ নাই, পিসী তিনখানা চিঠিতে লিখিয়াছে অষ্টমীর দিন সে যেন অবশ্য অবশ্য রওনা হয়, কোন কারণে যেন অন্যথা না ঘটে। কথা না শুনিলে পিসী বড় রাগ করে। সুপ্রভার মেয়ে শুনিয়া বলে, বোঝো তো ভাই, আসার মত আসা এই তো তোমার প্রথম, দুদিন না থাকলে কেমন লাগে আমাদের?

 মোহিনী কয়েক ঘণ্টা ভাবে, তারপর সুপ্রভার মেয়েকে ডাকিয়া বলে, আচ্ছা দশমী পর্যন্ত থাকব।

 শুনিয়া শ্যামা আসিয়া বলে, থাকলে পিসী রাগ করবে বলছিলে?

 গিয়ে বুঝিয়ে বলব'খন।—মোহিনী বলে।

 শ্যামা তবু ইতস্ততঃ করে: জোর করে ধরে রেখেছি বলে পিসী তো শেষে—?

 মনটা শ্যামার খুঁত খুঁত করে। কি যে জবরদস্তি সকলের। যাইতে দিলেই হইত অষ্টমীর দিন। তার মেয়ে জামাই, পিসীর নাম শুনিয়া সে চুপ করিয়া গেল, সকলের এত মাথাবাথা কেন? ওরা কি যাইবে পিসীর রাগের ফল ভোগ করিতে? ভুগিবে তার মেয়ে। সুপ্রভার মেয়ে একসময় তাহাকে একটা খবর দিয়া যায়। বলে, জান মামী, জামাই তোমার তার পাঠালে পিসীর কাছে। কি লিখেছে জান, এখানে এক গণৎকার বলেছে পূজোর কদিন ওর যাত্রা নিষেধ।

 শ্যামা নিশ্বাস ফোলিয়া বলে, কি সব কাণ্ড মা! আমার ভাল লাগছে না খুকী, এমন করে কাউকে রাখতে আছে!

 আমরা রেখেছি নাকি? জামাই নিজেই তো বললে থাকবে।

 তখন শ্যামা হাসিয়া সুপ্রভার মেয়ের চিবুক ধরিয়া বলে, আরেকটি জামাই তো আমার এল না মা?