পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৬
জননী

দেখলে বুকের মধ্যে কেমন করতে থাকে। সেদিন দেখি বিড়বিড় করে কি সব বকছে আপন মনে, আমার তো ভাল মনে হয় না।

 বিধানের দু'চোখ ভরা রোষ, বলিল, তবু তো খাটিয়ে মারছেন।

 সুপ্রভা আহত হইয়া বলিল আমাকে তুমি এমন কথা বললে বিধান, কত বলেছি আমি, তুমি তার কি জানবে? মাকে তোমার একদণ্ড বসিয়ে রাখার সাধ্যি আছে কারো? নইলে এতলোক বাড়িতে, তোমার মা কিছু না করলে কাজ কি এ বাড়ির আটকে থাকবে?—সুপ্রভা অভিমান করিল। বেশ আমরা না হয় পর তুমি তো এসেছ। এবার পার যদি রাখ না মাকে তোমার বসিয়ে?

 বিধান কারো অভিমানকে গ্রাহ্য করে না। বলিল, না ছোট পিসি, মাকে আর এখানে আমি রাখব না, আমি নিতে এসেছি মাকে।

 ওমা, কোথায়? কোথায় নিয়ে যাবে?

 খবর রটিবামাত্র সুপ্রভার মুখের এই প্রশ্ন সকলের মুখে গুঞ্জরিত হইতে থাকে। বিধান শ্যামাকে লইতে আসিয়াছে? মাকে আর এখানে সে রাখিবে না? কোথায় লইবে? কার কাছে? অতটুকু ছেলে এখনো বি-এটা পর্যন্ত পাশ দেয় নাই, এসব কি মতলব সে করিয়াছে?

 পড়া ছেড়ে দিয়েছিস খোকা? চাকরি নিয়েছিস? আমাকে না বলে এমন কাজ কেন করতে গেলি বাবা—বলিয়া শ্যামা কাঁদিতে আরম্ভ করে।

 বিধান বলে, কাঁদছ কেন, এ্যাঁ? ভাল খবর আনলাম কোথায় আহ্লাদ করবে, তা নয় তুমি কান্না জুড়ে দিলে? পাশ তো দিতাম চাকরির জন্যে? ভাল চাকরি পেয়ে গেলাম আর পাশ দিয়ে কি করব? ব্যাঙ্কে লোক নেবার জন্যে পরীক্ষা হল। শঙ্কর আমাকে পরীক্ষা দিতে বললে। পাশ টাশ করব ভাবিনি মা, তিনশ’ ছেলের মধ্যে থার্ড হয়ে গেলাম। প্রথম সাতজনকে নিলে—নব্বই টাকায় সুরু।

 নব্বই? বিশ পঁচিশ টাকার কেরাণী বিধান তবে হয় নাই? শ্যামা একটু শান্ত হয়, বলে, আমায় কিছু লিখিসনি যে?

 এটা বোঝানো একটু কঠিন শ্যামাকে। পড়াশোনা করিয়া বিধান এক দিন বড় হইবে, এত বড় হইবে যে চারিদিকে রব উঠিবে ধন্য ধন্য—শ্যামার