পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী
১৬১

হইয়া বকুল শ্বশুরবাড়ি গিয়াছে, মেয়েটাকে শ্যামার একটু ভালবাসিতে ইচ্ছা হয়, শিশুর মত সরল আগ্রহের সঙ্গে শামু তাহার ভালবাসাকে গ্রহণ করে, শ্যামা হয় খুসি। কিন্তু বিধানের সঙ্গে শামুর আলাপ করিবার ভঙ্গিটা শ্যামার ভাল লাগে না। কেমন সব হেঁয়ালিভরা ঠাট্টা শামু করে, কেমন দুষ্টু দুষ্টু মুচকি হাসি হাসে, আড়চোখে কেমন করিয়া সে যেন বিধানের দিকে তাকায়,—সকলের সামনে কি একটা অদ্ভুত কৌশলে সে যেন গোপন একটা ভাবতরঙ্গ তার আর বিধানের মধ্যে প্রবাহিত করিয়া রাখে। অতিশয় দুর্বোধ্য, সূক্ষ্ম ও গভীর একটা লুকোচুরি খেলা। শ্যামা কিছু বুঝিতে পারে না, তবু ভালও তাহার লাগে না। একটু সে সতর্ক হইয়া থাকে। শামু বিধানের ঘরে গেলে মাঝে মাঝে নানা ছলে দেখিয়া আসে ওরা কি করিতেছে। কোনদিন শামুকে বিধান পড়া বলিয়া দেয়, সেদিন শামুর শ্রদ্ধাপূর্ণ নিরীহ ভাবটি শ্যামার ভাল লাগে। কোনদিন বিধান জ্ঞানবিজ্ঞানের কথা বলে, বুঝিতে না পারিয়া শামু ফ্যাল ফ্যাল করিয়া তাকায়, আর থাকিয়া থাকিয়া ঢোক গেলে, সেদিনও শ্যামার মন্দ লাগে না। সে অসন্তুষ্ট হয় সেদিন, যেদিন শামু করে দুষ্টামি। দরজার বাহিরে শ্যামা থমকিয়া দাঁড়ায়। চোখ ঘুরাইয়া মুখভঙ্গি করিয়া শামু কথা বলে, বিধানের মুখের কাছে তর্জনী তুলিয়া শাসায়, তারপর হাসিয়া যেন গলিয়া পড়ে—দেখিয়া রাগে শ্যামার গা রি রি করিতে থাকে। একি নির্লজ্জ ব্যবহার অতবড় আইবুড়ো মেয়ের! এত কিসের অন্তরঙ্গতা? বিধান ওকে এত প্রশ্রয় দেয় কেন?

 ঘরে ঢুকিয়া শ্যামা বলে, কি হচ্ছে তোদের!—খুব সাবধানে বলে। বিধান না টের পায় সে অসন্তুষ্ট হইয়াছে।

 শামু বলে, মাসিমা, আপনার ছেলে বাজি হেরে দিচ্ছে না—দিন তো শাসন করে?

 কিসের বাজি বাছা?—শ্যামা বলে।

 বললে জিভ দিয়ে আমি যদি নাক ছুঁতে পারি দু'টাকার সন্দেশ খাওয়াবে। নাক ছুঁলাম, এখন দিচ্ছে না টাকা।

 জিভ দিয়া নাক ছোঁয়া? এই ছেলেমানুষী ব্যাপার লইয়া ওদের হাসাহাসি? ছি, কি সব ভাবিতেছিল সে! তার সোনার টুক্‌রো ছেলে, তার

 ১১