পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী
১৬৭

কত বলেছি আসতে, এল একবার? নেমন্তন্ন না করলে বাবুর আসা হয় না, ভারি জামাই আমার। এদিকে তো মাছিমারা কেরানী পোস্টাপিসের।

 কিন্তু মোহিনী একদিন বিনা আহ্বানেই আসিল। লজ্জায় মুখ রাঙা করিয়া বিধানের কাছে সে স্বীকার করিল যে বকুলের চিঠি পাইয়া সে আসিয়াছে। বকুলকে এখন একবার আনা দরকার। পনের দিনের ছুটি লইয়া সে বাড়ি যাইতেছে। ইতিমধ্যে শ্যামা যদি তাহার পিসিকে একখানা চিঠি লিখিয়া দেয় আর চিঠির জবাব আসার আগেই বিধান যদি সেখানে গিয়া পড়ে, বকুলকে পাঠানোর একটা ব্যবস্থা মোহিনী তবে করিতে পারে।

 মোহিনীর কথাবার্তা বিধানের কাছে হেঁয়ালির মত লাগে। সে বলে, বোসো তুমি মাকে বলি।

 মোহিনী বলে, না না আমি গেলে বলবেন।

 কিন্তু তা হয় না। শ্যামাকে না বলিলে এসব সাংসারিক ঘোরপ্যাঁচ কে বুঝিতে পারিবে।

 বিধান শ্যামাকে সব শোনায়। শুনিবামাত্র ব্যাপার আঁচ করিয়া শান্ত নির্বাক শ্যামার সহসা আজ দেখা দেয় অসাধারণ ব্যস্ততা।

 কই মোহিনী? ডাক খোকা মোহিনীকে ডাক।

 শ্যামার চোখ ছল ছল করে। আসিবার জন্য তাই বকুল ইদানিং এত করিয়া লিখিতেছিল। তারা আনিবার ব্যবস্থা করিতে পারে নাই বলিয়া মেয়ে তার জামাইকে এমন চিঠি লিখিয়াছে যে বিনা নিমন্ত্রণে যে কখনো আসে না সে যাচিয়া আসিয়াছে বকুলকে আনানোর ষড়যন্ত্র করিতে, ছুটি লইয়া যাইতেছে বাড়ি। মোহিনীকে কত জেরাই যে শ্যামা করে! সজল চোখে কতবার যে সে মোহিনীকে মনে করাইয়া দেয় তার হাতে যেদিন মেয়েকে সঁপিয়া দিয়াছিল সেইদিন হইতে শ্যামার ছেলের সঙ্গে তার কোন পার্থক্য নাই, বিধান যেমন মোহিনীও তেমনি শ্যামার কাছে। অনুযোগ দিয়া বলে তোমার বাড়ির কারুর কি উচিত ছিল না বাবা একথাটা আমায় লিখে জানায়। আমি তার মা, আমি জানতেও পেলাম না ক'মাস কি বৃত্তান্ত? পিসি না বুঝুক, তুমি তো বোঝ বাবা মার দুঃখু?

 মোহিনীকে সে-বেলা এখানেই খাইয়া যাইতে হয়। জামাই কোনদিন