পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী
১৭১

রোজ হাঁটিয়া আপিস করা যদি বা সহ্য হয় একেবারে নব্বই নব্বইটা টাকাতেও যে মাসের খরচ কুলায় না এটুকু মাথা গরম করিয়া দেয় তরুণ মানুষের। বকুলকে একদিন বিধান ভয়ানক ধমকাইয়া দিল। বলিল বিয়ে! বিয়ে! একটা ট্যুসনি খুঁজে পাচ্ছি না। বিয়ে বিয়ে করে পাগল করে দিল আমায়। ফের ও কথা বললে চড় খাবি খুকী।

 বলিয়া সে আপিস গেল। বকুল নাইল না, খাইল না। গোসা করিয়া শুইয়া রহিল। বিকালে বাড়ি ফিরিয়া বিধান শুনিল শ্যামার বকুনি। তারপর সে বকুলকে তুলিয়া খাওয়াইতে গেল।

 আজ বিভা বসিয়াছিল বকুলের কাছে।

 বিধানের সঙ্গে আগে সে কোনদিন কথা বলে নাই। আজ দয়া করিয়া বলিল, পালাচ্ছেন কেন? আসুন না। কি বলেছেন বোনকে, বোন আজ রাগ করে সারাদিন খায় নি?

 তারপর বিভা বলিল, শামু খুব প্রশংসা করে বিধানের। জগতে নাকি এমন বিষয় নাই বিধান যা জানে না। পড়াটড়া জানিতে আসিয়া শামু বোধ হয় খুব বিরক্ত করে বিধানকে? আশ্চর্য মেয়ে! মানুষকে এমন জ্বালাতন করিতে পারে ও। বিভা এই সব বলে, বিধান মুখ লাল করিয়া আড়ষ্ট ভাবে শোনে। শ্যামাও তো পিছু পিছু আসিয়াছিল বিধানের। সে আর বকুল ভাবে শামুর কথা ওঠায় বিধানের মুখ লাল হইয়াছে। তারা তা বুঝিতে পারে না জীবনে যে কখনো মেয়েদের ধারে কাছে ঘেঁষে নাই, বিভার মত গান জানা মন টানা আধুনিক মেয়ের কাছে কি তার দারুণ অস্বস্তি।

 গভীর বিষাদে শ্যামার মন ভরিয়া যায়। এইবাব বুঝি তার একবারে হাল ছাড়িয়া দিবার দিন আসিয়াছে। অন্ধ মেয়ে দিয়া ভগবানের সাধ মিটিল না, ছেলে কাড়িয়া নেওয়ার ব্যবস্থা করিয়াছেন এবার। বিধানের স্নেহের স্রোত আর কি তার দিকে বহিবে? তার কড়া হাতের সেবা আব কি ভাল লাগিবে বিধানের? জননীকে আর তো বিধানের প্রয়োজন নাই। নিজের জীবন এবার নিজেই সে গড়িয়া তুলিবে যে অধিকার এতদিন শ্যামার ছিল নিজস্ব। শ্যামা বুঝিতে পারে জগতে এই পুবষ্কার মা পায়। বকুলকে বড় করিয়া দান করিয়াছে পরের বাড়ি, তার চোখের সামনে বিধানের নিজের স্বতন্ত্র জগৎ