পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী
১৮৭

রহিল। সুবর্ণকে দেখিয়া শ্যামা খুসি হয় নাই? তার সেবা করার জন্য সে যে হঠাৎ বৌকে লইয়া আসিয়াছে এটা সে খেয়াল করিল না? বিধান দুঃখিত হইয়া দাঁড়াইয়া রহিল। সুবর্ণের কি হইল বোঝা গেল না।

 শ্যামা মণিকে বলিল, যা ত মণি, তোর বৌদিকে ঘরে নিয়ে গিয়ে বসা গে। কি সব কাণ্ড বাবা এদের! রাতদুপুরে হুট করে নতুন বৌকে এনে হাজির—কিসে কি ব্যবস্থা হবে এখন?

 বিধান ভয়ে ভয়ে বলিল, বাইরে তোমার বেয়াই বসে আছেন মা।

 তাকেও এনেছিস? আমি পারবো না বাবু রাত দুপুরে রাজ্যের লোকের আদর আপ্যেন করতে, মাথা বলে ছিঁড়ে যাচ্ছে আমার, গা হাত যা চিবুচ্ছে যেন মুচড়ে যাচ্ছে,— কি বলে ওদের তুই নিয়ে এলি খোকা? এক ফোঁটা বুদ্ধি কি তোর নেই?

 কি রাগ শ্যামার! ছেলেবেলা যাকে সে ধমক দিতে ভয় পাইত সেই ছেলেকে কি তার শাসন। বেশ গা-ঝাড়া দিয়া উঠিয়াই সে রাঁধিতে আসিয়াছিল। সুবর্ণকে দেখিয়াই তার মাথা ধরিয়া গেল, গা-হাত চিবাইতে আরম্ভ করিল, শ্যামার অন্ত পাওয়া ভার। কি শোচনীয় ভাবে তার মনের জোর কমিয়া গিয়াছে। তারই সেবার্থে পরিণীতা পত্নীকে তারই সেবার জন্য অসময়ে বিধান টানিয়া লইয়া আসিয়াছে—শুধু অনুমতি নেয় নাই, আগে ছেলের এই কাণ্ডে শ্যামা কত কৌতুক বোধ করিত, কত খুসি হইত, আজ শুধু বিরক্ত হওয়া নয়, বিরক্তিটুকু চাপিয়া পর্যন্ত রাখিতে পারিতেছে না। এ আবার কি রোগ ধরিল শ্যামাকে? ছেলে একটি যৌবনোচ্ছলা মেয়েকে বাছিয়া বিবাহ করিয়াছে বলিয়া জননীর কি এমন অবুঝ হওয়া সাজে।

 ছেলে তো এখনো পর হইয়া যায় নাই? মেনকা উবর্শী তিলোত্তমার মোহিনী মায়াতেও পর হইয়া যাওয়ার ছেলে তো সে নয়? শ্যামা কি তা জানে না? এমন অন্ধ জ্বালাবোধ কেন তার?

 বোধ হয় হঠাৎ বলিয়া, ওরা খবর দিয়া আসিলে এতটা হয়ত হইত না। ক্রমে ক্রমে শ্যামা শান্ত হইল। একবার পরণের কাপড়খানার দিকে চাহিল,—না, হলুদ-কালি-মাখা এ কাপড়ে কুটুমের সামনে যাওয়া যায় না।—যা ত' খোকা, চট করে ওপোর থেকে একটা সাফ কাপড় এনে দে তো আমায়। কাপড়