পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮
জননী

পাইল না। এমন যদি হইত যে মন্দার স্বভাব ভাল নয়, সে দেখিতে কুৎসিত, তাহাকে লইয়া রাখাল সুখী হইতে পারে নাই, আবার বিবাহ করিবার কারণটা তাহার শ্যামা বুঝিতে পারিত। মনের মিল তো দুজনের কম হয় নাই? এ বাড়িতে পা দিয়া অসুস্থ মন্দার যে সেবাটাই রাখালকে সে করিতে দেখিয়াছিল তাও শ্যামার মনে আছে।

 এমন কাজ তবে সে কেন করিল? শ্যামা ভাবে, ঘুমাইতে পারে না। চৌকির উপর শীতল নাক ডাকায় ঘুমন্ত সন্তানের মুখ হইতে স্তন আলগা হইয়া খসিয়া আসে, জননী শ্যামা আহত উত্তেজিত বিষণ্ণ মনে আর একটি জননীর দুর্ভাগ্যের কথা ভাবিয়া যায়। রাখালের অপকার্যের একটা কারণ খুঁজিয়া পাইলে সে যেন স্বস্তি পাইত। কে বলিতে পারে এরকম বিপদ তারও জীবনে ঘটিবে কি না? শীতল তাে রাখালের চেয়ে ভাল লােক নয়। কিসের যােগাযােগে স্ত্রী ও জননীর কপাল ভাঙ্গে মন্দার দৃষ্টান্ত হইতে সেটুকু বােঝা গেলে মন্দ হইত না। তারপর একটা কথা ভাবিয়া হঠাৎ শ্যামার হাত পা অবশ হইয়া আসে। মন্দা জননী বলিয়াই হয় তাে বাখালেব স্ত্রীর প্রয়োজন হইয়াছে? ছেলের জন্য মন্দা স্বামীকে অবহেলা কবিয়াছিল, স্ত্রী বর্তমানে রাখাল স্ত্রীর অভাব অনুভব করিয়াছিল—হয়ত তাই সে আবার বিবাহ করিয়াছে?

 পরদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গিয়া শীতল দেখিল বুকের উপর ঝুঁকিয়া মুখের কাছে হাসিভরা মুখখানা আনিয়া শ্যামা তাহাকে ডাকিতেছে। শ্যামা যে রাত্রেই বার বার প্রতিজ্ঞা করিয়াছিল ছেলের জন্য কখনাে সে স্বামীকে তাহার প্রাপ্য হইতে বঞ্চিত করিবে না। শীতল তাে তাহা জানিত না, এও সে জানিত না যে প্রতিজ্ঞা-পালনে স্বামীর ঘুম ভাঙ্গিবার নিয়মিত সময় পর্যন্ত সবুর শ্যামার সহে নাই। শীতল তাহাকে ধাক্কা দিয়া সরাইয়া দিল। বলিল, হয়েছে কি?

 বেলা হল উঠবে না?

 শীতল পাশ ফিরিয়া শুইল। বিড়বিড় করিয়া সে যা বলিল তা গালাগালি।

 তখন শ্যামা বুঝিতে পারিল সে ভুল করিয়াছে। ছেলের জন্য স্বামীকে