পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী
২৯

অবহেলা না করিবার প্রক্রিয়া এটা নয়। স্বামী যতটুকু চাহিবে দিতে হইবে ততটুকু, গায়ে পড়িয়া সােহাগ করিতে গেলে জুটিবে গালাগালি।

 মন্দার কোন পরিবর্তন নাই। সে তাে এখনাে জানে না। ছেলেদের লইয়া সে ব্যস্ত ও বিব্রত হইয়া রহিল। আড়চোখে তাহার সানন্দ চলাফেরা দেখিতে দেখিতে শ্যামার বড় মমতা হইতে লাগিল। সে মনে মনে বলিল, অ পােড়াকপালী! বেশ হেসে খেলে সময় কাটাচ্ছ, ওদিকে তােমার যে সর্বনাশ হয়ে গেছে। যখন জানবে তুমি করবে কি?—একটা বিড়ালছানার জন্য মারামারি করিয়া কানু ও কালু কাঁদিতেছিল। দেখাদেখি কোলের ছেলেটিও কান্না জুড়িয়াছিল। শ্যামা সাহায্য করিতে গেলে মন্দা তাহাকে হটাইয়া দিল। তিনজনকে সে সামলাইল একা।

 শ্যামার চোখ ছলছল করিতে লাগিল। সে মনে মনে বলিল, কার ছেলেদের এত ভালবাসছ ঠাকুরঝি? সে তাে তােমার মান রাখে নি!

 মন্দার সমস্যা শ্যামাকে বড় বিচলিত করিয়াছে। রাখালের প্রতি সে যেন ক্রমে ক্রমে বিদ্বেষ বােধ করিতে আরম্ভ করে। সংসাবে স্ত্রীলােকের অসহায় অবস্থা বুঝিতে পারিয়া নিজের কাছে সে অপদস্থ হইয়া যায়। যে আশ্রয় তাহাদের সবচেযে স্থায়ী কত সহজে তাহা নষ্ট হইয়া যায়। যে লােকটির উপর সব দিক দিয়া নির্ভর করিতে হয়, কত সহজে সে বিশ্বাসঘাতকতা করিয়া বসে।

 মন্দা অবশ্যই এবার অনেক দিন এখানে থাকিবে। এ আরেক সমস্যার কথা। আর্থিক অবস্থা তাহাদের স্বচ্ছল নয়, নূতন চাকরীতে শীতল নিয়মিত মাহিনা পায় বটে, টাকার অঙ্কটা কিন্তু ছােট। শীতলের কিছু ধার আছে, মাঝে মাঝে কিছু কিছু শুধিতে হয়, সুদও দিতে হয়। খরচ চলিতে চায় না। তিনটি ছেলে লইয়া মন্দা বেশি দিন এখানে থাকিলে বড়ই তাহারা অসুবিধায় পড়িবে। শ্যামা অবশ্য এসব অসুবিধার কথা ভাবিতে বসিত না, অত ছােট মন তাহার নয়,—যদি তাহার খােকাটি না আসিত। মন্দার জন্য তাহারা স্বামী-স্ত্রী না-হয় কিছুদিন কষ্টই ভোগ করিল, কারাে খাতিরে খােকাকে তো তাহারা কষ্ট দিতে পারিবে না! ওর যে ভাল জামাটি জুটিবে না, দুধ কম পড়িবে, অসুখে বিসুখে উপযুক্ত চিকিৎসা হইবে না, শ্যামা