পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী
৩৫

গ্রাহ্য কবে না, ওর মধ্যে যে তার সঙ্গে ভাব জমাইতে পারে বুড়া তার সঙ্গে কথা বড় কম বলে না। বাবা বলিয়া ডাকিয়া শ্যামা তাহার মুখ খুলিয়া দিয়াছে, রাজ্যের কথার মধ্যে খোকার যে কত বড় ফাঁড়া কাটিয়াছে তাও সে শ্যামাকে শােনাইয়া দিল। বলিল বিকাল পর্যন্ত তাহাকে না ডাকিলে আর দেখিতে হইত না। জ্বর বাড়িতে বাড়িতে এক সময়—

 গিয়ে একটা ওষুধ পাঠিয়ে দিচ্ছি রাণীর হাতে—পাঁচ ফোঁটা করে খাইয়ে দিও দুধের সঙ্গে মিশিয়ে চামচেয়—গরুর দুধ নয় মা সে ভুল যেন করে বােসাে না। আধ ঘণ্টা পর পর তাপ নিয়ে যদি দ্যাখাে জ্বর কমছে না, গা মুছে দিও।

 সন্ধ্যাবেলা আপনি আর একবার আসবেন বাবা।

 হারান দবজার কাছে গিয়া একবাব দাঁড়াইল। বলিল, ভয় পেয়ো না মা। এবার জ্বর কমতে আরম্ভ করবে।

 শ্যামা ভাবিল সাহস দিবার জন্য নয় হারান হয়ত ভিজিটের টাকার জন্য দাঁড়াইয়াছে। কত টাকা দিবে, যাহাকে বাবা বলিয়া ডাকিয়াছে দুটো একটা টাকা কেমন করিয়া তাহার হাতে দিবে, শ্যামা ভাবিয়া পাইতেছিল না। অত্যন্ত সঙ্কোচের সঙ্গে সে বলিল, উনি বাড়ি নেই।

 এলে পাঠিয়ে দিও। বলিয়া হারান চলিয়া গেল। স্বয়ং শীতলকে অথবা ভিজিটের টাকা কি যে সে পাঠাইতে বলিয়া গেল কিছুই বুঝিতে পারা গেল না।

 শীতলের ফিরিবার কথা ছিল রাত্রি আটটায়। সে আসিল পরদিন বেলা বারটাব সময। বিষ্ণুপ্রিয়া কার কাছে খবর পাইয়া এবেলা শ্যামাকে ভাত পাঠাইয়া দিয়াছিল, শীতল যখন আসিয়া পৌঁছিল সে তখন অনেক ব্যঞ্জনের মধ্যে শুধু মাছ দিয়া ভাত খাইয়া উঠিয়াছে এবং নিজেকে তাহার মনে হইতেছে রোগমুক্তাব মত।

 শীতল জিজ্ঞাসা করিল, খােকা কেমন?

 ভাল আছে।

 কাল গাড়ি ফেল করে বসলাম, এমন ভাবনা হচ্ছিল তােমাদের জন্যে!

 শ্যামার মুখে অনুযােগ নাই, সে গম্ভীর ও রহস্যময়ী। কাল বিপদে