পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০
জননী

 সত্যভামা আজও এ বাড়িতে কাজ করে, সে উঠানে বাসন মাজিতেছিল, বলিল, নিজে গলা টিপে মেরে ফেললে মা, এমন দুরন্ত ছেলে জন্মে দেখিনি,—সন্দোর ছ্যানাটি গাে!

 তুই মেরেছিস? কেন মেরেছিস খােকা? শ্যামা বারবার জিজ্ঞাসা করিল, বিধান কথা বলিল না। আরও বেশি করিয়া কাঁদিতে লাগিল। শেষে শ্যামা রাগিয়া বলিল, কাঁদিস নে মুখপােড়া ছেলে, নিজে মেরে আবার কান্না কিসের?

 মরা পাখিটাকে সে প্রাচীর ডিঙ্গাইয়া বাহিরে ফেলিয়া দিল।

 রাত্রে শ্যামা শীতলকে ব্যাপারটা বলিল। বলিল এসব দেখিয়া শুনিয়া তাহার বড ভাবনা হয়। কেমন যেন মন ছেলেটার। এত মায়া ছিল পাখির বাচ্চাটার উপর। ছেলের এই দুর্বোধ্য কীর্তি লইয়া খানিকক্ষণ আলােচনা করিয়া তাহারা দুজনেই ছেলের মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। বিধান তখন ঘুমাইয়া পড়িয়াছিল। এরকম রহস্যময় প্রকৃতি ছেলেটা পাইল কোথা হইতে? ওর দেহ মন তাদের দুজনের দেওহা, তাদের চোখের সামনে হাসিয়া কাঁদিয়া খেলা করিযা ও বড় হইয়াছে, ওর মধ্যে এই দুর্বোধ্যতা কোথা হইতে আসিল?

 শ্যামা বলে, তােমায় এ্যাদ্দিন বলিনি মাঝে মাঝে গম্ভীর হয়ে ও কি যেন ভাবে, ডেকে সাড়া পাইনে।

 শীতল গম্ভীরভাবে মাথা নাড়িয়া বলে, সাধারণ ছেলের মত হয়নি।

 শ্যামা সায় দেয়। কত বাড়ির কত ছেলে তাে দেখি আপন মনে খেলাধুলাে করে, খায় দায় ঘুমােয়, এ যে কি ছেলে হয়েছে, কারো সঙ্গে মিল নেই। কী বুদ্ধি দেখেছ?

 শীতল বলে, কাল কি হয়েছে জান? জিগ্যেস করেছিলাম দশ টাকা মণ হলে আড়াই সেরে দাম কত, সঙ্গে সঙ্গে বললে দশ আনা। কতদিন আগে বলে দিয়েছিলাম যত টাকা মণ আড়াই সের তত আনা, ঠিক মনে রেখেছে।

 বাড়িতে একটা পােষা বিড়াল ছিল, রাণী। একদিন দুপুরবেলা গলায় দড়ি বাঁধিয়া জানালার শিকের সঙ্গে ঝুলাইয়া দিয়া কাঁদিতে কাঁদিতে বিধান