পাতা:জননী - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জননী
৪৯

লইয়া শীতে কাঁপিতে কাঁপিতে শীতল ফিরিয়া আসিল। শ্যামা জিজ্ঞাসা করিল, খেয়ে এসেছ?

 শীতল বলিল, না।

 সেই রাত্রে শ্যামা কাঠের উনানে ভাত চাপাইয়া দিল। রান্না শেষ হইতে রাত্রি তিনটা বাজিয়া গেল। শীতল ঘুমাইয়া পড়িয়াছিল, ডাকিয়া তুলিয়া তাহাকে খাইতে বসাইয়া শ্যামা ঘরে গিয়া শুইয়া পড়িল। কাছে বসিয়া শীতলকে খাওয়ানাের প্রবৃত্তি হইল না বলিয়া শুধু নয়, ঘুমে তাহার শরীর অবশ হইয়া আসিতেছিল।

 পরদিন শীতল শ্যামাকে একশত টাকা ফেরত দিল।

 আর কই? বাকি টাকা কি করেছ?

 আর তুলি নি তাে?

 তোলাে নি? খাতা কই আমার?

 খাতাটা হারিয়ে গেছে শ্যামা, কোনখানে যে ফেললাম—

 শ্যামা কাঁদিতে আরম্ভ করিয়া দিল, সব টাকা নষ্ট করে এসে আবার তুমি মিছে কথা বলছ, আমি পাঁচশাে টাকা সই করে দিলাম, একশাে টাকা তুমি কি করে তুললে, মিছে কথাগুলো একটু আটকালাে না তোমার মুখে—দোতালায় ঘর তুলব বলে আমি যে টাকা জমাচ্ছিলাম গাে?

 শীতল আস্তে আস্তে সরিয়া গেল।


 এবছর প্রথম স্কুল খুলিলেই বিধানকে শ্যামা স্কুলে ভর্তি করিয়া দিবে ভাবিয়াছিল। কিন্তু এইসব টাকার গােলমালে ফাল্গুন মাস আসিয়া পড়িল, বিধানকে স্কুলে দেওয়া হইল না। শহরতলীর এখানে কাছাকাছি স্কুল নাই, আনন্দমােহিনী মেমােরিয়াল হাই স্কুল কাশীপুরে প্রায় এক মাইল তফাতে। এতখানি পথ হাঁটিয়া বিধান প্রত্যহ স্কুল করিবে, শ্যামার তাহা পছন্দ হইতেছিল না। কলিকাতার স্কুলে ভর্তি করিলে বিধানকে ট্রামে বাসে যাইতে হইবে, শ্যামার সে সাহস নাই। প্রেসে যাওয়ার সময় শীতল যে বিধানকে স্কুলে পৌঁছাইয়া দিবে তাহাও সম্ভব নয়, শীতল কোনদিন প্রেসে যায় দশটায়, কোনদিন একটায়। শ্যামা মহা সমস্যায় পড়িয়া গিয়াছিল। অথচ ছেলেকে